এই শহরের প্রতিটি বাসিন্দা যদি নিজেকে মেয়র হিসেবে ভাবেন, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে যাবে। আর এভাবেই আমরা ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
তিনি বলেন, ‘নগরবাসীর সেবা করাটা আমার কাছে জটিল কিছু মনে হচ্ছে না। গত কয়েক মাসের অভিজ্ঞতায় বুঝতে পেরেছি, আন্তরিকতা থাকলে অনেক কাজ করা যায়। অবশ্য এজন্য সবার সহযোগিতারও প্রয়োজন রয়েছে।’
সম্প্রতি বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেয়র সাঈদ খোকন এসব কথা বলেছে।
২০১১ সালের নভেম্বরে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। নাম দেওয়া হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। নির্বাচন না হওয়ায় দুই সিটি করপোরেশন পরিচালিত হয় প্রশাসক দিয়ে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ও উত্তরে আনিসুল হক মেয়র নির্বাচিত হন।
সমস্যার পাহাড় মাথায় নিয়ে সাঈদ খোকন ডিএসসিসি’র দায়িত্বভার গ্রহণ করেন গত বছর ৬ মে। এরপর থেকে অবিরাম ছুটে চলছেন নগরীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। প্রায় সাড়ে তিন বছর জন প্রতিনিধিহীন নগরীর সমস্যা মোকাবেলায় রীতিমত হিমশিম খেতে হয় তাকে। প্রায় আট মাসের কাজের অভিজ্ঞতা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন মুখোমুখি হয়েছেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের।
গত আট মাসে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
সাঈদ খোকন: দায়িত্ব নেওয়ার পর শুধু সমস্যার কথাই শুনতে হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব সমস্যা দেখেছি। এভাবে বেশ কিছু দিন চলে যায়। এরপর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আমরা বৈঠক করে নানা পরামর্শ গ্রহণ করি। নগর সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি ২৬টি সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে ইতিমধ্যে বৈঠক করেছি। এর ভিত্তিতে বেশ কিছু বড় বড় কাজও হাতে নিয়েছি। আগামীতে আরও নেওয়া হবে।
বর্তমানে কোন বিষয়টাকে আপনি বড় মনে করছেন?
সাঈদ খোকন: আপাতত আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হল ফান্ড। সিটি করপোরেশনের কোষাগারে পযাপ্ত টাকা নেই। তাই সরকারের মুখাপেক্ষী হতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প তৈরি করে সরকারের অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
তাহলে তো শিগগিরই অনেক কাজ আমরা দেখতে পাব?
সাঈদ খোকন: সরকার থেকে অর্থ পেতে অনেক সময় লেগে যায়। কোনও প্রকল্প পাঠালে তার অনুমোদন পেতেও সময় লাগে। প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ প্রাপ্তি যদি ত্বরান্বিত হত, তাহলে অনেক কাজই দ্রুত করে ফেলতে পারতাম। তাই বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে একটু সময় লাগতে পারে।
তাহলে আমরা নগরবাসীরা কি সহসাই ভালো কিছু দেখতে পাব না?
সাঈদ খোকন: অবশ্যই পারবেন। কারণ প্রায় ৩০০ রাস্তার মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছি। এই তো জানুয়ারির মধ্যেই এসব কাজ শুরু হয়ে যাবে। বলতে পারি, এবার বর্ষার আগে নগরীর ৮৫ শতাংশ রাস্তা মেরামত করা হবে। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি ভবিষ্যতে ঢাকায় একটা রাস্তাও ভাঙা থাকবে না।
একুশে ফেব্রুয়ারির আগে শহীদ মিনারকেন্দ্রীক অন্তত একটি সড়ক এলইডি লাইটে আলোকিত হবে। পান্থকুঞ্জ থেকে শুরু করে বাংলামটর, শেরাটন মোড়, হেয়ার রোড, কাকরাইল মসজিদ, মৎস্যভবন, কদম ফোয়ারা, কার্জন হল, দোয়েল চত্বরসহ বেশ কিছু স্থানে এই এলইডি লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এলইডি লাইট লাগাতে পারলে সড়কগুলোতে স্টেডিয়ামের ফ্লাড লাইটের মত আলো হবে।
এবার আমরা যেসব সড়ক মেরামত করব, তার ৭৫ শতাংশ হবে ইট-সিমেন্টের (সিসি) ঢালাই। পিচ ঢালাইর রাস্তা কম হবে। কারণ সিসি ঢালাইয়ের রাস্তা টেকে অনেক বেশি। পিচ দিয়ে কার্পেটিং করলে বৃষ্টির কারণে তা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টেকেও কম। তবে প্রধান সড়কগুলো পিচের কার্পেটিং হবে। এর কারণ হল সিসি ঢালাইয়ের রাস্তা করতে সময় বেশি লাগে। আর পিচ দিয়ে রাস্তা কার্পেটিং করতে সময় লাগে কম। প্রধান সড়কগুলোকে বেশিক্ষণ বন্ধ রাখা যাবে না বলেই পিচের কার্পেটিং করা হবে। সিসি ঢালাই হবে ওয়ার্ডের ভেতরের রাস্তা ও অলি-গলি।
আপনি তো রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। নিজে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর শাখার নেতা। আপনার বাবা সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফও ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দলীয় ঠিকাদার কিংবা নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন নাকি?
সাঈদ খোকন: নাহ্। আমাকে এ ধরনের কোনও পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হচ্ছে না। সবাইকে বলে দিয়েছি কোনও অন্যায় আবদার আমি গ্রাহ্য করব না। এজন্য কেউ আমাকে ডিস্টার্ব করছে না। তাছাড়া যেসব ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাদেরকে সংশোধন ও তাদের ব্যবহার পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। আশা করি আমি পারব।
আপনি চলতি বছরটাকে পরিচ্ছন্নতার বছর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, ঢাকাকে আপনি পরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত করবেন। এজন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই প্রচারাভিযান চালাচ্ছেন। এই কর্মসূচির সর্বশেষ অবস্থা কি?
সাঈদ খোকন: আমাদের এই কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এর ফলে মানুষ আরও সচেতন হচ্ছে। আসলে ঢাকাকে পরিষ্কার রাখা সিটি করপোরেশনের পক্ষে একা সম্ভব না। এ কাজের সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। এই শহরে প্রতিটি নাগরিক নিজেকে মেয়র হিসেবে মনে করবেন। ময়লা আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলা যাবে না, সন্ধ্যার পর নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা রাখতে হবে, যাতে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা সেগুলো নিয়ে যেতে পারেন- তাহলেই আমাদের এই নগরী একদিন পরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত হবে।
রাজধানীতে যাতে পরিচ্ছন্ন থাকে সেজন্য দায়িত্ব গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই আমি রাজপথ থেকে অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণ করি। এই তো কিছুদিন আগেও আমি নিজে দাড়িয়ে থেকে দৃষ্টিকটু ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করি।
যানজট নিরসনে কি উদ্যোগ নিয়েছেন?
সাঈদ খোকন: রাস্তা ও ফুটপাত দিয়ে মানুষ ও যানবাহন যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারে সেজন্য প্রায় প্রতিদিনই আমাদের অভিযান চলছে। কয়েকদিন আগে গুলিস্তান এলাকায় টিঅ্যান্ডটি অফিসের পাশে অবৈধভাবে নির্মিত মার্কেট গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গুলিস্তানেও অভিযান চলছে।
তবে সমস্যা হলো, স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত রয়েছে বলে উচ্ছেদ অভিযানের পর ম্যাজিস্ট্রেট চলে এলে হকাররা আবারও রাস্তায় বসে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পুলিশ যদি একটু দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত তাহলে হকাররা আর বসতে পারত না।