রাজধানীর উত্তর বাড্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলীকে হত্যার পেছনে দু’টি কারণ থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে তার পরিবার। স্থানীয় নির্বাচনে কাউন্সিলর হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোয়ন পাওয়া অথবা ডিস ব্যবসার কারণে চলমান দ্বন্দ্বের কারণে আওয়ামী লীগের এই নেতাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন তার বড় ছেলে আবিদ হাসান।
শুক্রবার(১৫ জুন) দুপুরের জুমার নামাজ শেষে স্থানীয় বায়তুস সালাম জামে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের হাতে গুলিবিদ্ধ হন ফরহাদ আলী। তাকে উদ্ধার করে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
উত্তর বাড্ডায় নিজ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ফরহাদের ছেলে আবিদ হাসান বলেন, ‘আমার বাবা স্থানীয় নির্বাচনে কাউন্সিলর হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। যদিও নির্বাচনটি স্থগিত রয়েছে। এই একটি কারণ হতে পারে। এছাড়া এলাকায় ডিস ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বাবার সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল। এই কারণেও তাকে হত্যা করা হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় ডিস ব্যবসায়ী ফজলুল হক দুলালের সঙ্গে বাবার ৪০ ভাগ শেয়ার ছিল। ব্যবসা কয়েক বছর ধরে। ডিস ব্যবসার কারণে প্রতিপক্ষরা এর আগেও বাবাকে মারতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের লোকজনের কারণে তখন পারেনি। আজ সুযোগ পেয়ে হয়তো গুলি করে মেরেছে।’
গত কয়েকদিন আগে নিহত ফরহাদ আলী ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার ফজলুল হককে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়েছিলেন বলে জানান নিহতের ভাগ্নে হীরা ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘মামাকে ডিসি স্যার ডেকে নিয়েছিলেন। ডিস দুলালও ছিলেন। ডিসি স্যার ডিস দুলালকে বলেছেন, মামাকে যেন ৪০ শতাংশ শেয়ার বাবদ আর কোনও টাকা না দেয়। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আলাদা লাইসেন্স করে কিছুদিনের মধ্যে ব্যবসা শুরু করবো। এটা টের পেয়ে মামাকে হত্যা করা হয়েছে। ৪০ ভাগ শেয়ারের টাকাটা স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৪২ জনের মধ্যে ফরহাদ ভাগ করে দিতেন।’
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্কাইলিংক ক্যাবল নেটওয়ার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক দুলাল। তিনি বলেন, ‘ফরহাদ ও আমি ছোটবেলার বন্ধু। আমাকে এই এলাকায় বিয়ে করিয়েছিলেন তিনি। আমি ডিস ব্যবসা করছি গত ১৮ বছর। আমার এই ব্যবসার পার্টনার সাতজন। চার বছর আগে ফরহাদ আমাকে ডেকে নিয়ে যান। তার সঙ্গে ১৮-১৯ জন ছিল। তিনি আমাকে বলেন ব্যবসা করবেন। অনেকটা বাধ্য হয়ে আমি আমার এখান থেকে ৪০ ভাগ শেয়ার দিতে রাজি হই। সেই শেয়ারের টাকা তিনি নিয়মিত পেতেন।’
ডিসি অফিসে দু’জনকে তলবের বিষয়ে ফজলুল হক বলেন, ‘সম্প্রতি ডিসি সাহেব আমাকে তার অফিসে ডেকে পাঠান, সেখানে গিয়ে দেখি ফরহাদও এসেছেন। আমি নিজেও জানতাম না, কী কারণে ডাকা হয়েছে। কারণ আমাকে ওসি সাহেব শুধু জানিয়েছিলেন, ডিসি সাহেব ডেকেছেন। আমরা যাওয়ার পর ডিসি সাহেব আমাদের কাছে ব্যবসার কী কাগজ আছে, তা জানতে চান। আমি আমার যা যা আছে বলি। কিন্তু ফরহাদ কোনও কাগজ দেখাতে পারেননি। তিনি বলেছিলেন যে, পার্টনার। কিন্তু আমি ৪০ শতাংশ টাকা দিতাম তিনি চাইতেন বলে। এখানে তো পার্টনারশিপ নেই। কোনও পার্টনারশিপ বা বৈধ কাগজ ছাড়া ৪০ শতাংশ শেয়ার ফরহাদকে না দিতে বলে দেন ডিসি সাহেব। তিনি ফরহাদকে এও বলেন, এসব কাজ চলবে না। আপনার বিরুদ্ধে একাধিক রিপোর্ট রয়েছে। দলের নাম ভাঙিয়ে টাকা নেওয়া চলবে না।’
ফজলুল হক আরও বলেন, ‘ডিসি স্যার আমাকে অন্যায়ভাবে কোনও টাকা কাউকে না দেওয়ার কথা বলেছিলেন। আমরা দুজনই তার সিদ্ধান্ত মেনে চলে আসি। আমাদের মধ্যে কোনও ঝামেলা ছিল না। আমি থানায় বা ডিসির কাছে কোনও অভিযোগ করিনি।’
নিহত ফরহাদ আলী ও ফজলুল হককে অফিসে ডেকে নিয়ে আসার বিষয়ে গুলশান জোনের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘আমরা এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন কারণে যাদের প্রয়োজন মনে করি তাদের ডেকে এনে কথা বলি। এখন এই হত্যাকাণ্ড কী কারণে হয়েছে, সেটা তদন্ত হবে। তদন্ত অনুযায়ী, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’