পরিবেশবান্ধব বাহন হিসেবে বিশ্বজুড়েই বাইসাইকেলের কদর বেশ। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) ২৮ দেশে সেই বাইসাইকেল রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন তৃতীয় অবস্থানে। শীর্ষ দুই অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে তাইওয়ান ও কম্বোডিয়া।
ইউরোপিয়ান কমিশনের তথ্যানুযায়ী, ইইউর বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে ২০১৭ সালে ১০৮ কোটি ইউরোর বাইসাইকেল কিনেছে ইইউভুক্ত ২৮ দেশ। তার মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৬ কোটি ৫৪ লাখ ইউরো বা ৬৪২ কোটি টাকার (১ ইউরোতে ৯৮ দশমিক ২০ টাকা) বাইসাইকেল। ২০১৬ সালে রপ্তানি হয়েছিল ৬ কোটি ৫১ লাখ ইউরোর বাইসাইকেল। সেই হিসাবে গত বছর রপ্তানি বেড়েছে দশমিক ৪৬ শতাংশ। ১০ বছর আগেও ইইউতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল মাত্র আড়াই কোটি ইউরো।
ইইউতে গত বছর সর্বোচ্চ ৪৪ কোটি ৬৩ লাখ ইউরোর বাইসাইকেল রপ্তানি করেছে তাইওয়ান। আর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কম্বোডিয়ার রপ্তানি ছিল ২৮ কোটি ৮৩ লাখ ইউরো। তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ।
এদিকে ইইউর প্রতিটি দেশেই বাইসাইকেল উৎপাদিত হচ্ছে। তারা প্রত্যেকে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানিও করে। সেই হিসাবে গত বছর জার্মানি সর্বোচ্চ ৫০ কোটি ইউরোর বাইসাইকেল রপ্তানি করেছে ইইউতে। নেদারল্যান্ডস রপ্তানি করেছে ৪৪ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের বাইসাইকেল। তা ছাড়া পর্তুগাল ২০ কোটি, বেলজিয়াম ১৮ কোটি, ইতালি ১৫ কোটি, বুলগেরিয়া ৯ কোটি ৮৭ লাখ ও স্পেন ৮ কোটি ৮৬ লাখ ইউরোর বাইসাইকেল রপ্তানি করেছে। ইইউভুক্ত দেশগুলো একে অপরের মধ্যে যে রপ্তানি করে, সেটিকে বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশ অবশ্য শীর্ষ দশের তালিকায় নেই।
ইইউর বাইরেও বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ বাইসাইকেল রপ্তানি করে। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে গত অর্থবছরে ৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের বাইসাইকেল রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই আয় তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি।
দেশের বাইসাইকেল রপ্তানিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে মেঘনা গ্রুপ। ১৯৯৬ সালে ঢাকার তেজগাঁওয়ে সরকারি বাইসাইকেল তৈরির প্রতিষ্ঠান কিনে নেয় তারা। তিন বছর পর রপ্তানি শুরু করে। বর্তমানে ট্রান্সওয়ার্ল্ড বাইসাইকেল, ইউনিগ্লোরি ও মাহিন সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ নামে তিনটি ইউনিটে সাইকেল উৎপাদন করছে মেঘনা গ্রুপ। এসব কারখানায় প্রতিটিতে ৪০০ শ্রমিক কাজ করেন। তা ছাড়া ইউনিগ্লোরি হুইলস নামের কারখানায় সিট, প্যাডেল, গ্রিপসহ সাইকেলের বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং মেঘনা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজে টায়ার ও টিউব উৎপাদন হচ্ছে। সব মিলিয়ে সাইকেলের ৯০ শতাংশ যন্ত্রাংশ তৈরি করছে মেঘনা গ্রুপ।
জানা যায়, মেঘনা গ্রুপ গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে চার কোটি ডলারের বাইসাইকেল রপ্তানি করেছে। এ ছাড়া তাদের কারখানায় উৎপাদিত টায়ার ও টিউব বিশ্বের ১৮ দেশে সরাসরি রপ্তানি হয়েছে। যার পরিমাণ ২০ লাখ ডলারের কাছাকাছি। রপ্তানির পাশাপাশি দেশের বাজারেও সাইকেল বিক্রি করছে তারা।
জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের পরিচালক মো. লুৎফুল বারী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাইসাইকেল রপ্তানির ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। প্রতিবছরই রপ্তানি বাড়ছে। তবে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে সাইকেল উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করা খুবই ব্যয়বহুল। কারণ, সরঞ্জাম উৎপাদনের পশ্চাৎমুখী কারখানা ছাড়া সাইকেলের ব্যবসায় টিকে থাকা মুশকিল।’
জার্মানির টিউব কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে যাচ্ছে মেঘনা গ্রুপ। তাতে গাজীপুরে অত্যাধুনিক কারখানায় খুবই উন্নত মানের বাইসাইকেল উৎপাদিত হবে। এসব তথ্য দিয়ে লুৎফুল বারী বলেন, কারখানাটি হলে বাংলাদেশের সাইকেল শিল্প নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। সেখানে জার্মানির মতো একই মানের বাইসাইকেল উৎপাদন করা হবে।
মেঘনার পাশাপাশি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, আলিটা, ফায়ার-ফক্স ও জার্মান বাংলা কোম্পানি বাইসাইকেল রপ্তানি করে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ ২০১৪ সালে বাইসাইকেল রপ্তানি শুরু করে। বর্তমানে ইইউর বিভিন্ন দেশে বছরে ১ লাখ ২০ হাজার বাইসাইকেল রপ্তানি করছে তারা।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ইইউতে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার কারণে বাইসাইকেল রপ্তানি বাড়ছে। তবে বাইসাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আমদানিতে ৫৫ শতাংশ শুল্ক লাগে। সেটি কমানো হলে রপ্তানি আরও বাড়বে।