নারীশিক্ষা নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর দেওয়া বক্তব্যকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক’ বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রোববার দেওয়া এক বিবৃতিতে ওই বক্তব্যের সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।
গত শুক্রবার হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে মেয়েদের স্কুল-কলেজে না পাঠাতে বলেন। আর পাঠালেও চতুর্থ কিংবা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর আহ্বান জানান। তাঁর এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কয়েকটি রাজনৈতিক, মানবাধিকার ও নারী সংগঠন এই বক্তব্য প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে।
মেয়েদের স্কুলে না পাঠানো নিয়ে আহমদ শফীর বক্তব্য ‘সম্পূর্ণ তাঁর নিজস্ব’ বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে এক সভায় বলেন, ‘যেহেতু যেকোনো নাগরিকেরই বাক্স্বাধীনতা আছে, তাঁর মনের ভাবনা প্রকাশ করার অধিকার আছে। তিনিও (আহমদ শফী) দেশের নাগরিক হিসেবে তাঁর নিজের একটা বিশ্লেষণ দিয়েছেন। সেটা আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মেয়েদের স্কুল-কলেজে না পাঠানোর জন্য হেফাজতে ইসলামের আমিরের বক্তব্যে আমি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি। একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এই ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশিদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিব্রত করবে। নারী-শিক্ষার সঙ্গে ধর্মের কোনো বিরোধ নেই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনে করে সুশিক্ষায় নারী আলোকিত না হলে তাদের বিকাশ ও প্রকৃত ক্ষমতায়ন হবে না।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষিত না হলে সমাজকল্যাণ, অর্থনৈতিক ও মানবিক সাম্যসহ ইসলামের অন্তর্নিহিত মর্মবাণী বুঝতে পারবে না। সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ ঘটে মায়ের কাছ থেকেই। নৈতিক ও অক্ষরপরিচয়ের প্রথম পাঠশালাই হলো মায়ের সাহচর্য। সুতরাং মা সুশিক্ষিত না হলে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানটি ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত হয় না।
শিক্ষা নিয়ে নিজ দল বিএনপির নীতিও বিবৃতিতে তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্য দূর করতে নারীশিক্ষা অপরিহার্য। বাংলাদেশের মোট জনসমষ্টির অর্ধেকই নারী। প্রাচীন প্রথা ও কুসংস্কারের নিগড় থেকে বেরিয়ে এসে জাতিগঠন ও জাতীয় অর্থনীতিতে যথার্থ ভূমিকা পালনের প্রধান শর্ত হচ্ছে নারীশিক্ষা। এটি বিএনপির ঘোষিত নীতি।
নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, নারীরা শিক্ষিত না হলে তাঁরা প্রতারণা, লাঞ্ছনা ও শোষণ বঞ্চনা থেকে রক্ষা পাবে না। নিগ্রহ ও অসম্মানের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের অক্ষরহীন নারীদের অবশ্যই পড়ালেখা করতে হবে। তা না হলে আমাদের দেশ ও সমাজ পিছিয়ে পড়বে।