ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে চতুর্থবারের মতো মাঠে নামছে পুলিশ। আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, আগামী ১৫ দিন ট্রাফিক আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা হবে। পুলিশের পাশাপাশি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউট, বিএনসিসি ও বাংলাদেশ গার্ল গাইডের সদস্যরা যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে কাজ করবেন।
এই কার্যক্রমের মাধ্যমে ট্রাফিক শৃঙ্খলার উন্নতি হচ্ছে বলে মনে করেন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। রবিবার (১৩ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি দাবি করেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের নেওয়া ট্রাফিক সপ্তাহ, ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ ও ট্রাফিক সচেতনতা মাস পালনের মাধ্যমে ট্রাফিক আইনের কঠোর বাস্তবায়ন হচ্ছে। পাশাপাশি এ কার্যক্রমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কারণে ঢাকা শহরের ট্রাফিক শৃঙ্খলার উন্নতি হচ্ছে।
সাধারণ জনগণ ও চালকদের ট্রাফিক আইন না মানার সংস্কৃতি, অপর্যাপ্ত ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সুবিধাসহ আরও কিছু কারণে ঢাকায় রাতারাতি ট্রাফিক শৃঙ্খলা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। তবে ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং জনসচেতনতার ফলে ঢাকা শহরে ট্রাফিক শৃঙ্খলার উন্নতি এখন অনেকটাই দৃশ্যমান বলে দাবি করেন তিনি। সেজন্য চতুর্থবারের মতো ঢাকা মহানগরীতে ট্রাফিক শৃঙ্খলা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আর এরই অংশ হিসেবে আগামী ১৫ দিনের জন্য বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ট্রাফিক শৃঙ্খলা কার্যক্রম সফল করার জন্য নগরবাসীকে সহযোগিতার অনুরোধও জানান ডিএমপি কমিশনার।
১৫ দিনে যেসব কার্যক্রম পরিচালিত হবে
১। ট্রাফিক সচেতনতামূলক লিফলেট, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, গাইড বই বিতরণ।
২। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সদস্যদের নিয়ে ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ইন্টার-সেকশনগুলোতে ট্রাফিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম অনুষ্ঠানের আয়োজন।
৩। রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, গার্ল গাইড, বিএনসিসি সদস্যদের ট্রাফিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা।
৪। ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণের সমন্বয়ের মাধ্যমে অবশিষ্ট জেব্রা ক্রসিং/রোড মার্কিংগুলো দৃশ্যমান/স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৫। মূল সড়কের পাশে অবস্থিত স্কুল-কলেজের ক্লাস শুরু এবং ছুটির সময়ে ওই এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ ও স্কুল-কলেজের ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা এবং এসব অঞ্চলে যথাযথ ট্রাফিক সাইন স্থাপন করা।
৬। হাইড্রলিক হর্ন বা উচ্চ শব্দবিশিষ্ট হর্ন, দ্রুতগতির যানবাহন, বেপরোয়া গতি, হুটার, বিকন লাইট, উল্টো পথে চলাচল এবং মোটরসাইকেলের আরোহীদের হেলমেট পরিধানসহ সব ধরনের ট্রাফিক আইন অমান্যের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিশেষ ট্রাফিক অভিযান এবং মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।
৭। ঢাকা মহানগরী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ২৯টি পয়েন্টে চেকপোস্ট কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।
৮। ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের উদ্বুদ্ধকরণে পুলিশ সদস্য মোতায়েন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।
৯। গাড়ি চালানোর সময় স্টপেজ ছাড়া সবসময় গাড়ির দরজা বন্ধ রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ।
১০। জেব্রা ক্রসিংয়ের আগে স্টপ (Stop) লাইন বরাবর গাড়ি থামানো ও স্টপেজ ছাড়া যত্রতত্র গাড়ি থামানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বামলেন ঘেষে নির্ধারিত স্টপেজে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা নিশ্চিত করা।
১১। ভিডিও মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
১২। এরই মধ্যে মডেল করিডোর ঘোষিত বিমানবন্দর থেকে শহীদ জাহাঙ্গীর গেইট, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, কদম ফোয়ারা, পুরাতন হাইকোর্ট হয়ে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ভিআইপি সড়কের ইন্টার-সেকশনগুলোতে রিমোর্ট কন্ট্রোল সরবরাহ নিশ্চিত করে অটোমেটিক ও রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে সিগন্যাল পরিচালনা করা।
১৩। ফার্মগেট থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত রাস্তাটিকে গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার প্রতিবাদ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারাদেশে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে। প্রায় দুই সপ্তাহ আন্দোলন চলার পর সরকারে আশ্বাসে তারা রাজপথ ছেড়ে ক্লাসে ফিরে। আন্দোলন চলাকালেই ট্রাফিক সপ্তাহ পালন শুরু করে পুলিশ। ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে ট্রাফিক সপ্তাহ, ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাসব্যাপী ট্রাফিক আইনের কঠোর বাস্তবায়নের জন্য ট্রাফিক সচেতনতা মাস পালন ও সর্বশেষ ২৪ থেকে ৩১ অক্টোবর ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ পালন করে ডিএমপি।