• প্রথম পাতা
  • জাতীয়
  • রাজনীতি
  • অর্থনীতি
  • সারাদেশ
  • আইন-আদালত
  • ফিচার
  • বিনোদন
  • খেলাধুলা
  • অন্যান্য
Sunday, May 11, 2025
Daily Nobojug
No Result
View All Result
  • প্রথম পাতা
  • জাতীয়
  • রাজনীতি
  • অর্থনীতি
  • সারাদেশ
  • আইন-আদালত
  • ফিচার
  • বিনোদন
  • খেলাধুলা
  • অন্যান্য
  • প্রথম পাতা
  • জাতীয়
  • রাজনীতি
  • অর্থনীতি
  • সারাদেশ
  • আইন-আদালত
  • ফিচার
  • বিনোদন
  • খেলাধুলা
  • অন্যান্য
No Result
View All Result
Morning News
No Result
View All Result
Home জাতীয়

সড়কে থামছে না মৃত্যুর মিছিল দায় কার

প্রকাশিতঃ 25/11/2019
সড়কে থামছে না মৃত্যুর মিছিল দায় কার
Share on FacebookShare on Twitter

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামের বেপারী বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। কান্না আর গগণ বিদারী আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। একদিন আগেও যে বাড়িতে চলছিল বিয়ের আনন্দ-উৎসব, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে একই পরিবারের সাত জনের মৃত্যুতে সেই বাড়ি পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। একটি বেপরোয়া বাসের কারণে সেই বিয়েবাড়ি এখন শোকের বাড়ি।

শুক্রবার দুপুরে কনকসার বাজার থেকে আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে দুই মাইক্রোবাসে করে স্বজনদের নিয়ে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের আলীনগরে যাচ্ছিলেন বর রুবেল বেপারী। সবাই ছিলেন আনন্দে মতোয়ারা। পথে শ্রীনগরের ষোলঘর বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছালে যাত্রীবাহী স্বাধীন পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাস বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসটি চাপা দিয়ে হত্যা করে দশ জনকে। দুমড়ে-মুচড়ে যায় মাইক্রোবাসটি।

মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, বাসটির ফিটনেস ছিল না। দু’টি গাড়িই চলছিল বেপরোয়া গতিতে। বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বরযাত্রীর গাড়ির ওপর পড়ে। মাইক্রোর চালক মারা গেছেন আর বাসের মালিক ও ড্রাইভারকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

কনকসার গ্রামের বেপারী বাড়ির মতোই দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে হূদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছে। সড়ক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার কারণে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। প্রতিদিনই একের পর এক প্রাণ ঝরছে। থামছে না সড়ক-মহাসড়কে বিদ্যমান বিশৃঙ্খলা। একটি দুর্ঘটনা শুধু প্রাণই কেড়ে নেয় না ,একটি পরিবারকে তছনছ করে দেয়। আর পঙ্গু হলে সারাজীবন এক ভয়াবহ করুণ জীবন বয়ে বেড়াতে হয়।

সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, এই অপ্রতিরোধ্য ও প্রতিকারহীন সড়ক দুর্ঘটনা, এই অসহায় মৃত্যু ও আহতদের জীবন্মৃত অবস্থায় বেঁচে থাকার দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ী কে বা কারা? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের গাড়ি চালকদের বেশিরভাগ অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত, অনেকের লাইসেন্স নেই, অনেকের লাইসেন্স ভুয়া। এদের হাতে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া বিপজ্জনক। অথচ মালিকদের একাংশ সেটাই করছে। লাইসেন্স দেওয়ার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সেখান টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণ ছাড়া লাইসেন্স দেওয়া হয়। গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেটের ক্ষেত্রেও এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই চলছে অগুণতি গাড়ি। সড়কে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। সেখানেও রয়েছে দুঃখজনক গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতা। গত ১৮ নভেম্বর সরকার নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকরের ঘোষণা দেবার পর থেকে তা সংশোধনের দাবি তুলে সেদিন থেকেই পরিবহন ধর্মঘট ও কর্মবিরতি শুরু হয়। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ২০ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করে। তবে রাতেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়।

প্রয়োজনীয়তার দাবির প্রেক্ষিতে সরকার আইনটি প্রণয়ন করেছে। কিন্তু ধর্মঘট ও নতুন আইন মানার ক্ষেত্রে পরিবহন চালক ও মালিকদের ঘোর আপত্তির কারণে বৈধ লাইসেন্স সংগ্রহের জন্য চালকদের ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমq দেওয়া হয়েছে। নতুন আইন প্রয়োগের সীমা বাড়ানো হয়েছে। নতুন পরিবহন আইনটি কার্যকর হলে সড়কে আগের তুলনায় গতি বাড়বে, শৃঙ্খলাও বাড়বে। তবে এই আইন কার্যকর করা নিয়ে এখন সরকার ও পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের মত বিরোধ চলছে।

জাতিসংঘ বলছে, বর্তমানে মানুষের মৃত্যুর তৃতীয় বড় কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। সরকারি হিসাবে গত দশ বছরে সড়কে প্রাণ গেছে ২৬ হাজার মানুষের। প্রতি বছর গড়ে আড়াই হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরো বেশি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) মতে, মহাসড়কে গড়ে প্রতি মিনিট পরপর একটি গাড়ি আরেকটি গাড়িকে ওভারটেকিংয়ের চেষ্টা করে। একটি গাড়ি আরেকটি গাড়িকে পাশ কাটাতে গেলেই দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়। এটি প্রতিরোধে মহাসড়কে কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নেই। সড়কে শৃঙ্খলা নেই বলেই দুর্ঘটনা ঘটে। আর সরকারের পক্ষ থেকে শৃঙ্খলা আনার উদ্যোগও খুব একটা চোখে পড়ে না। সড়ক নিরাপত্তা শুধু মুখে মুখেই। বাস্তবে কর্মসূচি নেই বললেই চলে। বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মহাসড়কে বিশেষ ক্যামেরা বসাতে হবে। কম খরচেই এটা করে অনেক মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব।

বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের জন্য রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ৩৮ লাখ গাড়ির। কিন্তু বৈধ রুটপারমিট নেই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যানবাহনের। ফিটনেস নেই কয়েক লাখ যানবাহনের। বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা দুরূহ বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং অবৈধ-অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত চালকরাই মূলত সড়কে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সরকারি পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, প্রতি বছরে গড়ে ২ হাজার ৫০০ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। ২০০৯ সাল থেকে গত ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ হাজার ৫২৬ জন নিহত এবং ১৯ হাজার ৭৬৩ জন আহত হয়েছেন। পুলিশের হিসাবে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে এ সংখ্যা ৬ থেকে ৭ হাজার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের মতে ১২ থেকে ১৪ হাজার। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাবি, ২০ হাজারেরও বেশি। হিসাবগুলোর মধ্যে পার্থক্য থাকলেও পুলিশের হিসাবের চেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা যে অনেক বেশি তাতে কোন সন্দেহ নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার মূল অনুষঙ্গ বেপরোয়া গতি। চালকেরা বেপরোয়া গতিতে এবং একের পর এক পাল্লা দিয়ে যান চালানোর কারণেই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায় কার তা এক কথায় উত্তর দেওয়া যাবে না। এখানে সিস্টেমেটিক ডেভেলপমেন্টের একটি ব্যাপার আছে। সেখানে যার যতটুকু দায়িত্ব সে ততটুকুর জন্য দায়ী হবে। রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা থাকার পরও যদি কোনো পথচারী তা ব্যবহার না করে রাস্তা পার হন এবং দুর্ঘটনার শিকার হন তাহলে এর জন্য ওই পথচারী দায়ী। আনফিট গাড়ি রাস্তায় চালিয়ে দুর্ঘটনার কারণ হলে ওই গাড়ির মালিক দায়ী হবেন। চালকের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকলে, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে সে যদি দুর্ঘটনা ঘটায় তাহলে এর জন সে দায়ী হবে। আবার ট্রাফিক পুলিশ যদি এনর্ফোস না করে তাহলে সেটার জন্য তারা দায়ী হবে। পরিবহন সেক্টর পরিচালনা জন্য যে পরিমাণ লোকবল দরকার সরকার যদি তা না দেয় তাহলে সরকার এর জন্য দায়ী হবে।

বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১২ হাজার মানুষের। বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪ তম। দুর্ঘটনাকবলিত কোনো যানবাহনের চালককে আটক করা হলেও বেশির ভাগ সময়ই তাদের শাস্তি হয় না। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সমস্যা, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা, জরুরি ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনাহীনতাও দুর্ঘটনা বাড়ার পেছনে দায়ী। শুধু চালকের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে শতভাগ কঠোর থাকতে পারলেই দুর্ঘটনা বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী, একবার ফিটনেস সনদ সংগ্রহ করলে তা নবায়নের তারিখ থেকে পরের এক বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে।ফিটনেস সনদ পেতে হলে গাড়িসহ বিআরটিএ কার্যালয়ে হাজির হতে হবে। সেখানে অন্তত ৩০ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ফিটনেস সনদ দেয়া হয়।একবার অকার্যকর হলে নবায়নে আগ্রহ দেখায়না অনেকে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, দেশে যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে, সত্যিকারে সে পরিমাণ যানবাহনের ফিটনেস সনদ নেই। আমরা পরিবহন মালিকদের বারবার তাগিদ দিচ্ছি কাগজপত্র নবায়ন করে নেয়ার জন্য। চিঠি দিয়েও জানিয়েছি। অনেকেই নবায়ন করছেন। আবার অনেকেই এখনও করেনি।তিনি বলেন, এটা সত্য, দক্ষ চালকের অভাব আছে৷ আমরা বাধ্য হয়েই অদক্ষ দালকদের হাতে গাড়ি তুলে দিচ্ছি৷ এই চালকদের মধ্যে লাইসেন্স নেয়ার প্রবণতাও কম৷

অদক্ষ চালকদের হাতে কেন গাড়ি দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অদক্ষদের হাতে গাড়ি দেয়ার পরও চালকের অভাবে অনেক গাড়ি বসে থাকে৷ দেশে চালকের সংকট রয়েছে৷ আমরাও তো চেষ্টা করে পারছি না। এখনও ২০ ভাগের বেশি গাড়ি চালকের অভাবে প্রতিদিন রাস্তায় নামানো যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়েই আমরা এত টাকার গাড়ি অদক্ষ চালকদের হাতে তুলে দিচ্ছি। আমরাও চাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক, মানুষ নিরাপদে চলাফেরা করুক। কোনো মালিক কি চাইবেন তার এত টাকার গাড়ি কাউকে চাপা দিক, আর জনতা সেই গাড়ি ভাঙচুর করুক বা আগুন লাগাক?

জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, বিভিন্ন সময়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে অনেক সুপারিশ করা হয়েছে। এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করলে সড়কে কোনো বিশৃঙ্খলা থাকবে না। কিন্তু যাদের ওপর এই দায়িত্ব তারাই কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। অন্য একটি সমস্যা হচ্ছে পরিবহন সেক্টরে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই নেতাদের কারণে পরিবহন শ্রমিকরাও সড়কে বেপরোয়া হয়।

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামের বেপারী বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। কান্না আর গগণ বিদারী আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। একদিন আগেও যে বাড়িতে চলছিল বিয়ের আনন্দ-উত্সব, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে একই পরিবারের সাত জনের মৃত্যুতে সেই বাড়ি পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। একটি বেপরোয়া বাসের কারণে সেই বিয়েবাড়ি এখন শোকের বাড়ি।

শুক্রবার দুপুরে কনকসার বাজার থেকে আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে দুই মাইক্রোবাসে করে স্বজনদের নিয়ে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের আলীনগরে যাচ্ছিলেন বর রুবেল বেপারী। সবাই ছিলেন আনন্দে মতোয়ারা। পথে শ্রীনগরের ষোলঘর বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছালে যাত্রীবাহী স্বাধীন পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাস বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসটি চাপা দিয়ে হত্যা করে দশ জনকে। দুমড়ে-মুচড়ে যায় মাইক্রোবাসটি।

মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, বাসটির ফিটনেস ছিল না। দু’টি গাড়িই চলছিল বেপরোয়া গতিতে। বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বরযাত্রীর গাড়ির ওপর পড়ে। মাইক্রোর চালক মারা গেছেন আর বাসের মালিক ও ড্রাইভারকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

কনকসার গ্রামের বেপারী বাড়ির মতোই দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে হূদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছে। সড়ক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার কারণে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। প্রতিদিনই একের পর এক প্রাণ ঝরছে। থামছে না সড়ক-মহাসড়কে বিদ্যমান বিশৃঙ্খলা। একটি দুর্ঘটনা শুধু প্রাণই কেড়ে নেয় না ,একটি পরিবারকে তছনছ করে দেয়। আর পঙ্গু হলে সারাজীবন এক ভয়াবহ করুণ জীবন বয়ে বেড়াতে হয়।

সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, এই অপ্রতিরোধ্য ও প্রতিকারহীন সড়ক দুর্ঘটনা, এই অসহায় মৃত্যু ও আহতদের জীবন্মৃত অবস্থায় বেঁচে থাকার দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ী কে বা কারা? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের গাড়ি চালকদের বেশিরভাগ অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত, অনেকের লাইসেন্স নেই, অনেকের লাইসেন্স ভুয়া। এদের হাতে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া বিপজ্জনক। অথচ মালিকদের একাংশ সেটাই করছে। লাইসেন্স দেওয়ার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সেখান টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণ ছাড়া লাইসেন্স দেওয়া হয়। গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেটের ক্ষেত্রেও এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই চলছে অগুণতি গাড়ি। সড়কে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। সেখানেও রয়েছে দুঃখজনক গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতা। গত ১৮ নভেম্বর সরকার নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকরের ঘোষণা দেবার পর থেকে তা সংশোধনের দাবি তুলে সেদিন থেকেই পরিবহন ধর্মঘট ও কর্মবিরতি শুরু হয়। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ২০ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করে। তবে রাতেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়।

প্রয়োজনীয়তার দাবির প্রেক্ষিতে সরকার আইনটি প্রণয়ন করেছে। কিন্তু ধর্মঘট ও নতুন আইন মানার ক্ষেত্রে পরিবহন চালক ও মালিকদের ঘোর আপত্তির কারণে বৈধ লাইসেন্স সংগ্রহের জন্য চালকদের ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমq দেওয়া হয়েছে। নতুন আইন প্রয়োগের সীমা বাড়ানো হয়েছে। নতুন পরিবহন আইনটি কার্যকর হলে সড়কে আগের তুলনায় গতি বাড়বে, শৃঙ্খলাও বাড়বে। তবে এই আইন কার্যকর করা নিয়ে এখন সরকার ও পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের মত বিরোধ চলছে।

জাতিসংঘ বলছে, বর্তমানে মানুষের মৃত্যুর তৃতীয় বড় কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। সরকারি হিসাবে গত দশ বছরে সড়কে প্রাণ গেছে ২৬ হাজার মানুষের। প্রতি বছর গড়ে আড়াই হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরো বেশি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) মতে, মহাসড়কে গড়ে প্রতি মিনিট পরপর একটি গাড়ি আরেকটি গাড়িকে ওভারটেকিংয়ের চেষ্টা করে। একটি গাড়ি আরেকটি গাড়িকে পাশ কাটাতে গেলেই দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়। এটি প্রতিরোধে মহাসড়কে কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নেই। সড়কে শৃঙ্খলা নেই বলেই দুর্ঘটনা ঘটে। আর সরকারের পক্ষ থেকে শৃঙ্খলা আনার উদ্যোগও খুব একটা চোখে পড়ে না। সড়ক নিরাপত্তা শুধু মুখে মুখেই। বাস্তবে কর্মসূচি নেই বললেই চলে। বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মহাসড়কে বিশেষ ক্যামেরা বসাতে হবে। কম খরচেই এটা করে অনেক মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব।

বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের জন্য রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ৩৮ লাখ গাড়ির। কিন্তু বৈধ রুটপারমিট নেই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যানবাহনের। ফিটনেস নেই কয়েক লাখ যানবাহনের। বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা দুরূহ বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং অবৈধ-অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত চালকরাই মূলত সড়কে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সরকারি পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, প্রতি বছরে গড়ে ২ হাজার ৫০০ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। ২০০৯ সাল থেকে গত ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ হাজার ৫২৬ জন নিহত এবং ১৯ হাজার ৭৬৩ জন আহত হয়েছেন। পুলিশের হিসাবে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে এ সংখ্যা ৬ থেকে ৭ হাজার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের মতে ১২ থেকে ১৪ হাজার। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাবি, ২০ হাজারেরও বেশি। হিসাবগুলোর মধ্যে পার্থক্য থাকলেও পুলিশের হিসাবের চেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা যে অনেক বেশি তাতে কোন সন্দেহ নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার মূল অনুষঙ্গ বেপরোয়া গতি। চালকেরা বেপরোয়া গতিতে এবং একের পর এক পাল্লা দিয়ে যান চালানোর কারণেই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায় কার তা এক কথায় উত্তর দেওয়া যাবে না। এখানে সিস্টেমেটিক ডেভেলপমেন্টের একটি ব্যাপার আছে। সেখানে যার যতটুকু দায়িত্ব সে ততটুকুর জন্য দায়ী হবে। রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা থাকার পরও যদি কোনো পথচারী তা ব্যবহার না করে রাস্তা পার হন এবং দুর্ঘটনার শিকার হন তাহলে এর জন্য ওই পথচারী দায়ী। আনফিট গাড়ি রাস্তায় চালিয়ে দুর্ঘটনার কারণ হলে ওই গাড়ির মালিক দায়ী হবেন। চালকের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকলে, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে সে যদি দুর্ঘটনা ঘটায় তাহলে এর জন সে দায়ী হবে। আবার ট্রাফিক পুলিশ যদি এনর্ফোস না করে তাহলে সেটার জন্য তারা দায়ী হবে। পরিবহন সেক্টর পরিচালনা জন্য যে পরিমাণ লোকবল দরকার সরকার যদি তা না দেয় তাহলে সরকার এর জন্য দায়ী হবে।

বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১২ হাজার মানুষের। বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪ তম। দুর্ঘটনাকবলিত কোনো যানবাহনের চালককে আটক করা হলেও বেশির ভাগ সময়ই তাদের শাস্তি হয় না। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সমস্যা, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা, জরুরি ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনাহীনতাও দুর্ঘটনা বাড়ার পেছনে দায়ী। শুধু চালকের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে শতভাগ কঠোর থাকতে পারলেই দুর্ঘটনা বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী, একবার ফিটনেস সনদ সংগ্রহ করলে তা নবায়নের তারিখ থেকে পরের এক বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে।ফিটনেস সনদ পেতে হলে গাড়িসহ বিআরটিএ কার্যালয়ে হাজির হতে হবে। সেখানে অন্তত ৩০ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ফিটনেস সনদ দেয়া হয়।একবার অকার্যকর হলে নবায়নে আগ্রহ দেখায়না অনেকে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, দেশে যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে, সত্যিকারে সে পরিমাণ যানবাহনের ফিটনেস সনদ নেই। আমরা পরিবহন মালিকদের বারবার তাগিদ দিচ্ছি কাগজপত্র নবায়ন করে নেয়ার জন্য। চিঠি দিয়েও জানিয়েছি। অনেকেই নবায়ন করছেন। আবার অনেকেই এখনও করেনি।তিনি বলেন, এটা সত্য, দক্ষ চালকের অভাব আছে৷ আমরা বাধ্য হয়েই অদক্ষ দালকদের হাতে গাড়ি তুলে দিচ্ছি৷ এই চালকদের মধ্যে লাইসেন্স নেয়ার প্রবণতাও কম৷

অদক্ষ চালকদের হাতে কেন গাড়ি দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অদক্ষদের হাতে গাড়ি দেয়ার পরও চালকের অভাবে অনেক গাড়ি বসে থাকে৷ দেশে চালকের সংকট রয়েছে৷ আমরাও তো চেষ্টা করে পারছি না। এখনও ২০ ভাগের বেশি গাড়ি চালকের অভাবে প্রতিদিন রাস্তায় নামানো যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়েই আমরা এত টাকার গাড়ি অদক্ষ চালকদের হাতে তুলে দিচ্ছি। আমরাও চাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক, মানুষ নিরাপদে চলাফেরা করুক। কোনো মালিক কি চাইবেন তার এত টাকার গাড়ি কাউকে চাপা দিক, আর জনতা সেই গাড়ি ভাঙচুর করুক বা আগুন লাগাক?

জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, বিভিন্ন সময়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে অনেক সুপারিশ করা হয়েছে। এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করলে সড়কে কোনো বিশৃঙ্খলা থাকবে না। কিন্তু যাদের ওপর এই দায়িত্ব তারাই কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। অন্য একটি সমস্যা হচ্ছে পরিবহন সেক্টরে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই নেতাদের কারণে পরিবহন শ্রমিকরাও সড়কে বেপরোয়া হয়।

সর্বশেষ

আল্লুর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন যেসব তারকা

আল্লুর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন যেসব তারকা

December 16, 2024
নির্বাচিত সরকারই রাষ্ট্র সংস্কার করবে : আমিনুল হক

নির্বাচিত সরকারই রাষ্ট্র সংস্কার করবে : আমিনুল হক

December 16, 2024
আব্দুল্লাহ মো. তাহেরকে নিয়ে ইলিয়াসের বক্তব্যের নিন্দা জামায়াতের

আব্দুল্লাহ মো. তাহেরকে নিয়ে ইলিয়াসের বক্তব্যের নিন্দা জামায়াতের

December 16, 2024
বনানীতে এনডিএম এর ঐক্যের র‍্যালি

বনানীতে এনডিএম এর ঐক্যের র‍্যালি

December 16, 2024
১৪ দিনে রেমিট্যান্স এলো সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা

১৪ দিনে রেমিট্যান্স এলো সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা

December 16, 2024
ঢাকা চেম্বারের নতুন সভাপতি তাসকীন আহমেদ

ঢাকা চেম্বারের নতুন সভাপতি তাসকীন আহমেদ

December 16, 2024
Daily Nobojug

হাউজ নং ৫৯৪, ৯৮, কাওরান বাজার
ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ

ইমেইলঃ [email protected]
বিজ্ঞাপনঃ [email protected]

সম্পাদকঃ ইসরাত রশিদ

সহ-সম্পাদক- জনি জোসেফ কস্তা

সিনিয়র সহ-সম্পাদকঃ নুরুল হুদা

উপদেষ্টাঃ নূর মোহাম্মদ

প্রকাশকঃ আলী আমিন ও মোহাম্মদ ওমর সানী

  • প্রথম পাতা
  • জাতীয়
  • রাজনীতি
  • অর্থনীতি
  • সারাদেশ
  • আইন-আদালত
  • ফিচার
  • বিনোদন
  • খেলাধুলা
  • অন্যান্য

© 2019 Daily Nobojug - All rights reserved.

No Result
View All Result
  • প্রথম পাতা
  • জাতীয়
  • রাজনীতি
  • অর্থনীতি
  • সারাদেশ
  • আইন-আদালত
  • ফিচার
  • বিনোদন
  • খেলাধুলা
  • অন্যান্য

© 2019 Daily Nobojug - All rights reserved.