নতুন বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট ঘোষণার পরদিন তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, টাকা কোথা থেকে আসবে ভাবিনি। বরং এই মুহূর্তে বেশি দরকার আয়ের অপেক্ষা না করে মানুষ বাঁচানোর চেষ্টা করা। আগে খরচ করে পরে আয় করবেন—এমনটিই তার বক্তব্যের প্রতিপাদ্য।
অর্থমন্ত্রী আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন এখন যেহেতু পরিস্থিতি ভিন্ন তাই ভিন্নভাবে বাজেট সাজাতে হয়েছে। তিনি বলেন, এবার আমরা দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছি। প্রথমটি হলো করোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে যেসব খাতে ক্ষতি হয়েছে সেগুলোকে চিহ্নিত করা। দ্বিতীয়টি হলো, মানুষের খাদ্য এবং চাকরির ব্যবস্থা করা। তাই আমরা আগে খরচ করব পরে আয় করব। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে অনেকেই চাকরি হারিয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ কর্মহীন হয়েছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী দ্রুত তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসলেন। তিনি নির্দেশনা দিলেন যাতে সমন্বিতভাবে কাজ করে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। সেভাবেই সারা দেশের মানুষদের সহায়তা করা হয়েছে। ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ১০ টাকায় চাল দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা যেভাবে এই বাজেট সাজিয়েছি সেভাবে বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব।
গতকাল শুক্রবার বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনটি করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রী সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফজলে কবীর, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
সংবাদ সম্মেলনে করোনা মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য হঠাত্ করে আমাদের অনেক টাকার প্রয়োজন হয়েছে। মানুষের খাদ্য এবং চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য আমাদের অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়েছে, সেটি আমরা করেছি।
৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য উচ্চাভিলাষি কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের অতীতের অর্জনের ভিত্তিতে এ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সবাই কী ভাবছে সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ যে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে সেটি ছিল সারা বিশ্বের সেরা অর্জন। আমি আশা করছি করোনা বেশি দিন প্রলম্বিত হবে না। আমাদের অতীতের অর্জনগুলো অসাধারণভাবে আমরা অর্জন করতে পেরেছি। আগামী অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট আদায় বাড়াতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানোর লক্ষ্য ছিল কিন্তু করোনার কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। ইএফডি বসানো হলে অর্থ সংগ্রহ বাড়বে। করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি আরো বাড়ানো প্রয়োজন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা বার্ষিক ৩ লাখ টাকা আয় করে, তারা গরিব নয়। আমরা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেব। কর আরোপ করা হয় সমতার ভিত্তিতে। যাতে ধনী-গরিবের ব্যবধান বেশি না হয়ে যায় সেটি বিবেচনায় নিয়ে আমরা কর কাঠামো তৈরি করি।
এবারের বাজেটে অর্থ পাচারকারীদের ৫০ শতাংশ জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, কোনো সরকারই চাইবে না অর্থ বিদেশে চলে যাক। যদি আইন থাকে আমরা সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। যদি আইনের ঘাটতি থাকে আমরা সেগুলো দেখব। আমরা চাই এদেশের অর্থ এদেশেই থাকবে। যারা এদেশে অর্থ উপার্জন করে এদেশে বিনিয়োগ করতে চাইবে না তারা চলে যাক।
পুঁজিবাজার নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার পুঁজিবাজার নিয়ে তেমন কিছু করে না। বাংলাদেশ যা করেছে বিশ্বের অন্য দেশ এত কিছু করে না। আমাদের একটি শক্তিশালী রেগুলেটরি বডি আছে। বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান এসেছে। সরকারি ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বরাদ্দের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। আমার মনে হয়, এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে জনমত গঠন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, যখনই স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আসবে তখন অগ্রাধিকার দিয়ে এগুলো অনুমোদন দিতে হবে।
ঘূর্ণিঝড় আমফানের ক্ষতি মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এবার আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বীজ-সার দেব। পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রণোদনা অর্থমন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়েছে। উপকূলে আমরা সবকিছু দেব।
মোবাইলে কথা বলার খরচ বাড়ছে—এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছেন, বর্তমানে কলরেট অনেক কম তাই অপ্রয়োজনীয় কথা বলার প্রবণতা বেড়ে গেছে। তবে কথা বলার প্রবণতা কমানোর জন্য কলরেটে আরো ৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়নি। বরং কলরেট কম তাই মাত্র ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে; যা ব্যয়ের সক্ষমতা মানুষের আছে।