বিদ্যুত্ উত্পাদনে কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসার সরকারি পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। তবে এ ক্ষেত্রে কয়লার পরিবর্তে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) ব্যবহার না করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক পরিকল্পনা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। সিপিডির মতে সরকার এক ধরনের জীবাশ্ব জ্বালানি থেকে আরেক ধরনের জীবাশ্ব জ্বালানির দিকে যাচ্ছে। এলএনজি ব্যবহারে পরিবেশের ক্ষতি প্রায় কয়লা ব্যবহারের সমান। এলএনজি-ভিত্তিক বিদ্যুত্ উত্পাদনে গেলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ উত্পাদন থেকে সরে আসার যে উদ্দেশ্য তা বাস্তবায়ন হবে না।
গতকাল ‘বিদ্যুত্ উত্পাদনে কয়লা বর্জনঃ সরকারি উদ্যোগ ও কতিপয় সুপারিশ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ কথা জানায় সিপিডি। সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান এসময় বক্তব্য দেন। মূল উপস্থাপনায় গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এই মুহূর্তে ২২টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এরমধ্যে ১৫টি সরকারি খাতে এবং সাতটি বেসরকারি খাতে। এগুলোতে ২৩ হাজার ২৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের লক্ষ্য ছিল। আমরা জানতে পেরেছি—বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ উত্পাদন থেকে সরে এসে বিকল্প পদ্ধতি এলএনজি ব্যবহারের জন্য একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দিয়েছে। এ জায়গাটাতে আমাদের যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে। আমরা সরকারকে সাধুবাদ জানাতে পারতাম যদি সরকার পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারে বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্য থাকত; কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি—কয়লাভিত্তিক জ্বালানি থেকে সরে এসে এলএনজিতে যাবার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, পরিবেশদূষণ রোধ এবং ২০৪১ সালের জ্বালানির মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়টি আসা প্রয়োজন ছিল। এক্ষেত্রে বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এলএনজি দিয়ে বিদ্যুত্ উত্পাদন করলে খরচ পড়বে প্রতি ইউনিট ১২ টাকা থেকে ২১ টাকা; কিন্তু এক গবেষণায় দেখা গেছে—এলএনজি কয়লার মতোই পরিবেশ দূষণ করে। অনেকে বলছে, সৌর বিদ্যুতে খরচ বেশি হবে; কিন্তু হিসাব করে দেখা গেছে—সৌর বিদ্যুতে খরচ পড়ে প্রতি ইউনিট ছয় টাকা ২৮ পয়সা। এই খরচ সামনের দিনগুলোতে আরো কমে আসবে। বর্তমানে চাহিদার যে হিসাব করা হচ্ছে তাতে ওভার ক্যাপাসিটি রয়েছে। কয়লা বর্জন করলেই দূষণমুক্ত জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে না। তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সরকারের নীতি অবস্থানকে গুরুত্ব দেন। যখন তারা দেখতে পান সরকারের মাস্টারপ্ল্যানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রাধিকারে নেই, ও রকম একটি নীতিকাঠামোতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কখনো উচ্চবিনিয়োগ প্রকল্প নিয়ে আসার আগ্রহ দেখান না।