আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন আশুলিয়ায় গুলি করে ছয়জনের মৃত্যু ঘটনার দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি এখনো যেন কাটিয়ে উঠতে পারেননি নিহতের পরিবার। চোখের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত অাস-সাবুরের বাবা, নাজেজ জাকি, নিজের অনুভূতিকে ধরে রাখতে পারেননি। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যের সময় ছয়টি মৃতদেহের একটি দেখিয়ে বললেন, ‘এটাই আমার ছেলে’। এর পরে তিনি অশ্রুসিক্ত ব očiতায় ভেঙে পড়েন। আদালত কক্ষে তখন ছিল স্তব্ধ নীরবতা। নাজেজ জাকি আশুলিয়ায় পুলিশ গুলিতে নিহত আস-সাবুরের বাবা। ঐদিন আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত ছয়জনের মধ্যে সাবুরও ছিল একজন।
গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই ঘটনার ভিডিও দেখানো হয়, যেখানে তিনি সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন। তিনি এই মামলায় প্রতিরোধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। ট্রাইব্যুনাল তিনজনের সাক্ষ্য নেয়, যার মধ্যে নাজেজ জাকির সাথে আরও দুজন ছিলেন—যাত্রাবাড়ীর রবিউল আওয়াল ভূঁইয়া এবং রাজশাহীর জসিম উদ্দিন।
নিজের ভাষায়, ৬০ বছর বয়সী নাজেজ জাকি জানান, তার ছেলে আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। পুলিশ তার ছেলে ও অন্য পাঁচজনের লাশ পেট্রোল ঢেলে পোড়ানোর বিষয়টি একেবারে স্পষ্টভাবে বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন সকালে তার ছেলে আস-সাবুর বাসা থেকে বের হয়ে মিছিলের জন্য যান। বাইপাইলে গেলে তাকে বড় ভাই রেজোয়ানাকে ফোন করে জানানো হয়, অনেক লোক গুলিবিদ্ধ হচ্ছেন এবং পড়ে যাচ্ছেন। এরপর সে আশুলিয়ায় গেলে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান, কারণ ঐ সময় এলাকায় গোলাগুলি তীব্রভাবে চলছিল। এরপর তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, পরদিন বিভিন্ন হাসপাতালে সারাদিন খুঁজাখুঁজি করেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমরান নামে একজন স্থানীয় সমন্বয়ক ফোন করে বলেন, আশুলিয়ায় পোড়ানো লাশ থাকার বিষয়টি তদন্ত করে দেখার। তখন তিনি তার বড় ছেলেকে লাশ দেখে শনাক্ত করতে পাঠান।
তারা লাশের পোড়া অংশ ও মোবাইলের সিম দেখে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। পরবর্তীতে সেই লাশ তার কাছ থেকে দাফনের জন্য গ্রামে নিয়ে যান। নিজে লাশ দেখার সময় খুবই কষ্ট পেয়েছেন, চেহারা এত বীভৎস ছিল যে চেনা সম্ভব ছিল না। এরপর তার দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয় রাতে নওগাঁর মহাদেবপুরে, যেখানে পরদিন সকাল সাড়ে ৯টায় আনুষ্ঠানিকভাবে দাফন সম্পন্ন হয়।
নাজেজ জাকি আদালতকে জানায়, তিনি ছেলেকে হত্যার দুটি ভিডিও রাখেন, যা ট্রাইব্যুনালে দেখানো হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, লাশকে ভ্যানের ওপর চ্যাংদোলা করে নিয়ে আসা হচ্ছে, অন্য ভিডিওতে পুলিশ ভ্যানে লাশ পোড়ানোর দৃশ্য ছিল। ওই সময় একজন পুলিশ সদস্যকে আগুন জ্বালানোর জন্য কাঠের বেঞ্চ দেয়া হচ্ছে। এই দৃশ্য দেখার সময় খুব কষ্টে অশ্রুসিক্ত হন নিহতের বাবা। তিনি দাবি করেন, এই হত্যাকাণ্ড আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চস্তরের নির্দেশনায় ঘটেছে, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ওবায়দুল কাদেরের উস্কানিতে, এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশে আশুলিয়া থানার পুলিশ এই নির্মম হত্যাকাণ্ড চালায়।
তিনি বলেন, ঢাকা উত্তরের উপপুলিশ কমিশনার, ডিবির এসআই ও অন্য সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় ও মদদে এই ঘটনা ঘটেছে। তার ছেলেসহ আরও পাঁচজনকে পুলিশ ভ্যানে তুলে পেট্রোল ও আগুনে পুড়িয়ে দেয়। তিনি বিক্ষুব্ধভাবে বিচার চান, যেন তার ছেলের হত্যাকারীদের স appropriate শাস্তি পাওয়া হয়।