রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে তিন দিনব্যাপী অংশীজন সংলাপ আজ রোববার শুরু হচ্ছে কক্সবাজারে। এই সংলাপটি আয়োজন করা হচ্ছে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উচ্চ পর্যায়ের এক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনের আগে, যেখানে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির সমাধানে কার্যকর সুপারিশ প্রণয়ন হবে। নিউইয়র্কের ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
সংলাপের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে উচ্চাকার্যক্রম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে। শিল্পপ্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এই আলোচনায় অংশ নেবেন। সংলাপে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে রোহিঙ্গা মানুষ, তাদের পুরুষ, নারী ও যুবকদের কথা, যাতে পাঠানো হয় তাদের আকাঙ্ক্ষা, অভিযোগ এবং ভবিষ্যত প্রত্যাশাগুলো সরাসরি আন্তর্জাতিক মহলের কাছে।
সংলাপে মোট পাঁচটি বিষয়ভিত্তিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে— গণসাহায্য ও তহবিলের চ্যালেঞ্জ, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি, প্রত্যাবাসনে বিশ্বাস সৃষ্টি, নৃশংসতার জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা, এবং দীর্ঘমেয়াদী, টেকসই সমাধানে কৌশল।
বিশেষ করে, ২৬ আগস্ট অংশীজনরা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে তাদের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো সরাসরি দেখার সুযোগ পাবেন। এই সংলাপের মূল লক্ষ্য হলো, নিউইয়র্ক সম্মেলনের জন্য কার্যকর ও সুস্পষ্ট সুপারিশ তৈরি করা, যাতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাস্তবায়নযোগ্য পথ নির্দেশনা পাওয়া যায়।
আশা করা হচ্ছে, এই সম্মেলে অন্তত ১৭০টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেবেন। সেখানে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা, তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে মিয়ানমারে গণহত্যা থেকে রেহাই পেয়ে বাংলাদেশে এসে আট বছর পার হলেও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা এখনও শেষ হয়নি। ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও আন্তর্জাতিক তহবিলের কমতির কারণে এই সংকট আরও গভীর হয়ে চলেছে।
সংলাপে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বৈদেশিক সাহায্য, আন্তর্জাতিক মনোযোগ ও স্বেচ্ছায় নিরাপদ প্রত্যাবাসন এই সংকটের সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উল্লেখ করেন, বিষয়টি ভুলে যাওয়া উচিত নয় এবং সম্মিলিত প্রয়াসে এই দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকটের সমাধান সম্ভব।
এই নিউইয়র্ক সম্মেলন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শরণার্থী সংকটের ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হবে।