ঢাকাই সিনেমার একজন প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। তার অভিনয় কৌশল ও সৌন্দর্যে শুধু দেশের দর্শকদের নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তবে известно, তিনি বেশ কিছু বছর ধরে রূপালি পর্দা থেকে দূরে রয়েছেন। ব্যক্তিগত কারণ ও পারিবারিক বিরোধের কারণে মিডিয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন এই অভিনেত্রী। তিনি অতীতে বিভিন্ন সিনেমায় অভিনয় করে দেশের চলচ্চিত্র প্রেমীদের মন জয় করে ছিলেন। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্বামী ও সন্তানসহ আবারও প্রকাশ্যে আসেন তিনি, নিজেদের জীবন ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
ঢাকাই সিনেমার এই জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা দীর্ঘদিন ধরে চ লচ্চিত্রের পর্দায় দেখাগ্রহণে অনুপস্থিত। তার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু বিষয় প্রকাশ্যে এসেছে, যখন তার পারিবারিক জমি নিয়ে বিরোধের জন্য থানায় জিডি হয়। তখনই তার বিবাহ ও সন্তানের খবর জানা যায়। বর্তমানে তিনি সংসার এবং সন্তান নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আজ তার জন্মদিন।
পপি বলেন, ‘যখন আমি নিয়মিত সিনেমায় কাজ করতাম, তখন আমার জন্মদিন ছিল বড় উৎসবের মত। দিনভর ভক্তরা ফোন করত এবং কাছের মানুষরা কেক ও ফুল পাঠাত। শুটিং সেটে ফিরে আমার জন্মদিন উদযাপন করতাম। আমার ফ্যান ক্লাবগুলোও বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করত। এখন আমার ঘরোয়া পরিবেশে এই বিশেষ দিনটি কাটছে। কিছু এতিমখানায় কোরআন খতম ও খাবার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
জীবনের নানা ওঠা-নামার মাঝে তিনি বলেন, ‘আমি পরিবারে দায়িত্ব পালন করি, কিন্তু নিজের ভিত্তি শক্ত না করে সবকিছু অন্যের জন্য বিলিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কারণ পরে কেউ আমার সমালোচনা করতে পারে। একসময় আমি মনে করতাম সবাই আমার জন্য, কিন্তু পরে বুঝতে পারি, কেউই আমার নয়। তখন আমার পাশে ছিল আমার শিল্পাঙ্গণের বন্ধু ও স্বামী আদনান। তার সহায়তায় আমি জীবনের পথে এগিয়ে যেতে পেরেছি।
অভিনেত্রীর ভাষ্য, ‘এখন আমি কিছু বলতে পারছি না, কারণ আমি এখন সিনেমায় কাজ করছি না। আমার বর্তমানে পুরো মনোযোগ পরিবার ও সংসারে। তবে খুব শিগগিরই আমার নতুন সিনেমা ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ মুক্তি পেতে যাচ্ছে, যা আমি ২০১৯ সালে এফডিসিতে শুটিং করেছিলাম। এটি পরিচালক সাদেক সিদ্দিকীর নির্দেশনায় নির্মিত। যেখানে আমি একজন পুলিশ কর্মকর্তা চরিত্রে থাকছি, তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন অভিনেতা আমিন খান।
পপি শেষবারের মতো ২০১৯ সালে ‘দ্য ডিরেক্টর’ সিনেমায় দেখা গিয়েছিল। এরপর ২০২০ সালে ‘ধোঁয়া’ নামের আরো একটি সিনেমায় অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে ছিলেন, কিন্তু সেটি আর চালু হয়নি। দীর্ঘ সময় পর ২০২২ সালে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে অংশ নেন তিনি ভিডিওবার্তার মাধ্যমে। তখন তিনি ঘোষণা করেন, ‘ভাগ্য থাকলে আবার ফিরে আসব’।
শুরুতে তার ক্যারিয়ার আত্মপ্রকাশ হয় নির্মাতা মনতাজুর রহমান আকবরের ‘কুলি’ সিনেমায়, যেখানে তাকে দেখা যায় ওমর সানির বিপরীতে। এই ছবিই তার ভাগ্য বদলে দেয়, কারণ এর মাধ্যমে তিনি সারা দেশে পরিচিতি পান এবং প্রথম থেকেই তার অভিনয় ক্ষমতা ও গ্ল্যামার পরিচালকদের নজরে আসে। এরপর তিনি একের পর এক মনোযোগপূর্ণ সিনেমায় যেমন ‘দরদি সন্তান’, ‘চারিদিকে শত্রু’, ‘অন্যায় আবদার’, ‘জোর’, ‘মনের মিলন’ এবং আরও অনেক সফল সিনেমায় অভিনয় করেন। সেসব সিনেমা তাকে বাংলার সিনেমা দর্শকদের হৃদয় জয় করতে সাহায্য করে।
তিনি ২০০৩ সালে ‘কারাগার’ সিনেমায় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর আরও বেশ কিছু সিনেমায় দায়িত্ব নিয়ে তিনি স্বীয় যোগ্যতা প্রদর্শন করেছেন, যেমন ‘মেঘের কোলে রোদ’ ও ‘গঙ্গাযাত্রা’ সিনেমায়। তার এই সাড়া জাগানো অভিনয়ই তাকে বাংলাদেশের সিনেমার একজন প্রভাবশালী ও সত্যিকার শিল্পী হিসেবে পরিচিত করে তোলে।