ইসরায়েলি সেনারা পশ্চিম তীরে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে একদিনেই এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে। গাজায় হামলা অব্যাহত রেখে সাধারণ মানুষের জীবন আরও বিপর্যস্ত হয়েছে। খবর শাফাক নিউজের জানা যাচ্ছে, টুলকার্মের গভর্নর নিশ্চিত করেছেন, শুক্রবারের অভিযানে ইসরায়েলি সেনারা একযোগে ১,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে।
অপরদিকে, রামাল্লার কাছে আইন ইয়াবরুদ এলাকায় চার ইসরায়েলি বসতির এখনো অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। সেখানে এক ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত যুবককে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে, তাকে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গাজার আল-আওয়দা হাসপাতালের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বিমান হামলায় তিনজন নিহত ও কমপক্ষে ৩৮ জন আহত হয়েছেন। মোট হামলাগুলোর সময় মানবিক সহায়তা নেওয়া মানুষের ভিড়ে এবং মধ্য গাজার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় এই হামলা হয়।
গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মৃতের সংখ্যা ৬৪,৭০০ ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি, ক্ষুধার কারণে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৩৮ জন শিশু।
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, গাজার সাধারণ মানুষ এখনও কোনও নিরাপদ আশ্রয় ছাড়াই বন্দি রয়েছে এবং তীব্র খাদ্যসংকটে ভুগছে।
অন্যদিকে, আফানিতে দুর্ভিক্ষ ও অনাহারে প্রতিদিনই প্রাণহানি ঘটছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে একটি শিশু রয়েছে। বার্তাসংস্থা আনাদোলু এই তথ্য জানিয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪,৭১৮ জনে। বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে এক শিশুসহ আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। একদিনে হাসপাতালে পৌঁছেছে ৭২ জনের লাশ, আহত হয়েছে ৩৫৬ জন। এর ফলে মোট আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৯ জনে। এখনও অনেক নিহতের শরীর ধ্বংসস্তূপের নিচে বা রাস্তায় পড়ে থাকায় উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।
গত ২৪ ঘণ্টায় ত্রাণ সংগ্রহের সময় ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আরও নয়জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং অন্তত ৮৭ জন আহত হয়েছেন। ফলে ২৭ মে থেকে ত্রাণ নেওয়া ব্যক্তির ক্ষয়ক্ষতি ২,৪৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে, আহতের সংখ্যা ১৭,৯৪৮ জন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া সাতজনের মধ্যে একটি শিশু রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দুর্ভিক্ষে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা ৪১১ এ পৌঁছেছে, যার মধ্যে ১৪২ জন শিশু। বিশেষ করে, মাত্র গত মাসে জাতিসংঘের ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি গাজাকে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করার পর থেকে ১৩৩ জন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ২৭ জন শিশু।
গত মার্চের শুরু থেকে ইসরায়েল গাজার সব সীমান্তের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা চালু করেছে, যার ফলে ২৪ লাখ মানুষের শহরটি মারাত্মক দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়েছে। এরপর, ১৮ মার্চ থেকে নতুন করে হামলা চালানো শুরু করলে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ১৭০ জন নিহত এবং ৫১ হাজার ৮১৮ জন আহত হয়েছেন। এই হামলার ফলে জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি কার্যত ভেঙে গেছে।
অতীতে, নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োআভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। একইসঙ্গে, গাজায় গণহত্যার জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও মামলা চলছে।