এই ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল শুধু যে বিজয়ের নিখুঁত উদাহরণ, তা নয়, বরং এটি ছাত্র রাজনীতিতে নতুন এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে, যা সব ছাত্রের জন্য উদ্দীপনার উৎস। অসম্ভবকে সম্ভবে রূপান্তর করার গল্পটি এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো: স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সাহস, নিষ্ঠা এবং দৃঢ় মনোবল অপরিহার্য। মনে রাখতে হবে, এই লড়াই কেবল একটি পদ বা ব্যক্তিগত সাফল্যের জন্য নয়, বরং এক সুন্দর ভবিষ্যত ও একাধিক উন্নতমানের সুবিধা গড়ার লক্ষ্যে। সফলতার চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছাতে মেধা এবং পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই, আর এই পথে রচিত হয়েছে নতুন ইতিহাস। এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া হলো মেধা, সততা ও দৃঢ়সংকল্পের সম্প্রীতি, যা একজন ছাত্রের উন্নত ভবিষ্যতের চাবিকাঠি।
অভিনন্দন জানাতে হওয়া এই জয়ে শিবিরের তিন প্রাপ্ত প্রতিযোগী—সাদিক কায়েম, এস এম ফরহাদ, ও মহিউদ্দিন খান—প্রতিটি একজনের অধিক ভোট দিয়ে তাদেরকে চমকপ্রদ বিজয়ে পরিণত করেছেন। এই সমস্ত বিজয় কৌশলে নয়, বরং তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং সৎ মানসিকতার ফল। ভিপি পদে সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট, যা শিবিরের দুর্দান্ত শক্তি gösterন। অন্যদিকে, ছাত্রদলের আবিদ পান ৫৬৫৮ ভোট, যা তুলনামূলকভাবে কম। জিএস পদে এস এম ফরহাদ ১০,৭৯৪ ভোট পেয়ে আবারও আধিপত্য দেখিয়েছেন, ছাত্রদলের হামিম তার কাছ থেকে অনেকটাই পিছিয়ে থাকেন। এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান ৯৫০১ ভোটে বিজয়ী হন, যেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মায়েদ পান ৪২৫৪ ভোট। এই বিশাল ভোটের ব্যবধানগুলোই প্রমাণ করে শিবিরের নেতৃত্ব সম্প্রতি শক্তিশালী অবস্থানে বিরাজ করছে।
শ্রোতাদের কাছে পরিচিত এই তরুণ নেতাদের মধ্যে রয়েছে নানা ব্যক্তিত্ব ও কৃতিত্ব। প্রথমে দেখা যাক মহিউদ্দিন খান মহিকে। তার চশমা, পাঞ্জাবি পরা ভদ্রতা এবং শিক্ষার প্রতি তার দারুণ আগ্রহ চরিত্রে ঔজ্জ্বল্য যোগ করে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী, যিনি ৩.৯৩ গ্রেড পেয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং মাস্টার্সে ৪.০০ পেয়ে চূড়ান্ত ফলাফলে স্থান পান। তিনি বিজয় ‘৭১ হলে থাকতেন, যেখানে ছাত্র রাজনীতিতে দীর্ঘ দিন সক্রিয় ছিলেন। স্নাতকোত্তর শেষের পর তিন দিনেই হল ছেড়ে দেওয়া তার সাহসী সিদ্ধান্ত এই নির্বাচনে তার জনপ্রিয়তার কারণ।
আরো গুরুত্বপূর্ণ নাম হলো এস এম ফরহাদ। ছোটখাটো দেখালেও, তার বিশাল দায়িত্বে থাকা তার প্রতিবাদী মনোভাব এবং রাজনৈতিক সচেতনতা অত্যন্ত জনপ্রিয়। ছাত্রদলের ভুলগুলো তিনি তুলে ধরেন এবং বাম রাজনীতির সমালোচনাও করে থাকেন। তার রুমমেট জানতেন না, তিনি আসলে একজন শিবির নেতা। ২০০৪ সালে যখন তার প্রকৃত পরিচয় প্রকাশিত হয়, তখন সবাই অবাক হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র, পাশাপাশি কবি জসীমউদ্দীন হলের আবাসিক। নির্বাচনে খুব বেশি প্রচার না করেও, তার জয় এলো স্বাভাবিকভাবেই, যা তার দৃঢ় মনোবল ও প্রজ্ঞার পরিচয় দেয়।
অন্যদিকে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরপ্রধান, সাদিক কায়েম, এই ফলাফলের মাধ্যমে শিবিরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করলেন। তিনি সবসময়ই সরল স্বভাবের এবং সাশ্রয়ী প্রচার করেছেন, কিন্তু তার বিজয় বিশাল, যা প্রথমবারের মতোবিন্যাস শিবিরের সবচেয়ে শক্তিশালী ভিপি হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। বিজয়ের দিন নামাজরত অবস্থায় তার একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে, যেখানে তিনি আল্লাহর নামে শপথ দিয়ে বলেছিলেন, ‘ডাকসুর কাজ হলো নেতা তৈরি নয়, বরং শিক্ষার্থীদের স্বার্থের জন্য কাজ করানো।’ তার লক্ষ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলোর সমাধানে অবদান রাখা, শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক সুবিধা বাড়ানো, আবাসন সমস্যা দূর করা এবং পার্টটাইম চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উঠে আসা একজন অসাধারণ ছাত্র, যিনি বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে ইতিমধ্যে তার মেধার পরিচয় দিয়েছেন।
জন্য বড় কিছু অর্জন করতে হলে শুধু মেধাই যথেষ্ট নয়, সাথে প্রয়োজন দৃঢ় সংকল্প, সততা ও নিষ্ঠা। এই নির্বাচনের ফলাফল থেকে স্পষ্ট, যখন মেধা, সততা ও সাহস একত্রিত হয়, তখন যে কোনো বাধা পেরনো সম্ভব। ছাত্র রাজনীতিকে কলঙ্কমুক্ত করার এই নতুন পথ খুব শীঘ্রই যেন বাংলাদেশের মুক্তির সোজাসাপটা আলোর পথে পরিণত হয়। এই বিজয় শুধু একটি পদ বা ব্যক্তিগত গৌরব নয়, এটি লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর অধিকার ও আশা পূরণের প্রতি এক সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতি। এই নতুন দিগন্তের সূচনা যেন আগামী দিনে শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে দাঁড়ায়।
সংক্ষিপ্ত জীবনীর তালিকা:
ডঃ তারনিমা ওয়ারদা আন্দালিব বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক এবং গ্লোবাল কনসালট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে অক্সফোর্ড ইমপ্যাক্ট গ্রুপে কর্মরত। দাউদ ইব্রাহিম হাসান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় মুখপত্র এবং আইডিএলসি ফাইনান্সের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টেও নিয়োজিত আছেন।