গত বছরের ৫ আগস্ট, যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান, তখন থেকেই তার অবস্থান সেখানে। তবে এরপর থেকে তিনি অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বাংলাদশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উসকানি ও ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন।
সম্প্রতি, ২০২৪ সালের শেষ ভাগে ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত একটি জুম বৈঠকে অংশ নেওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও আইনগত সংস্কার শুরু হয়। গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, ওই ভার্চুয়াল সভায় দেশের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও বেশ কিছু নেতাকর্মী অংশ নেন।
সিআইডির বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই সভায় অংশগ্রহণকারীরা সরকারি শাসনের বিরোধিতা, গৃহযুদ্ধ উসকে দেওয়া, এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় বসানোর জন্য আভাস দিয়েছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশ আসে। এরপর ২০২৫ সালের ৪ মার্চ মন্ত্রণালয় এই মামলার তদন্তের অনুমোদন দেয়। ২৭ মার্চ রমনা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়, যেখানে ধারা হিসেবে ধরা হয় বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর Sections ১২১, ১২১(ক), এবং ১২৪(ক)।
প্রায় পাঁচ মাসে তদন্ত শেষ করে সিআইডি অভিযোগপত্র দাখিল করে, যেখানে হাসিনা ও আরও ২৮৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। আদালত এখন তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার চলছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত তিন প্রধান এজেন্ডা—সংশোধন, নির্বাচন, ও বিচার প্রক্রিয়া—বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এই মামলার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। গতকাল, এই মামলার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিলের সময় বেশিরভাগ আসামি উপস্থিত ছিলেন না, ফলে আদালত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাদের হাজির হওয়ার আদেশ দেয়। এর পাশাপাশি, পলাতক থাকা বেশ ক’জন আসামিকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং কিছু আসামির অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন দিক উন্মোচন করেছে। এটি সরকারি শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, পাশাপাশি জড়িতদের জবাবদিহির পথে এক সঙ্কেত। দেশের দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে এই ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আরও কঠোর বার্তা দেওয়ার চেষ্টা। এখন দেখার বিষয়, অদূর ভবিষ্যতে এই মামলার শুনানি ও বিচার কী দিক নিয়ে যায়।