বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নে জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় জেলেরা বলছেন, তাদের নাম তালিকায় থাকলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হারুন বয়াতি চাল না দিয়ে অর্থের বিনিময়ে তা আত্মসাৎ করেছেন। এই ঘটনায় বুধবার দুপুরে অন্তত শতাধিক জেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারে কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন একটি তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যারা আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
জানা গেছে, আমতলি উপজেলায় মোট ৬ হাজার ৯৬৯ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। সরকারের নির্দেশনায় গত ৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। এই সময় জেলেদের জন্য ২৫ কেজি করে বিশেষ ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে এই চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা নিবন্ধিত জেলেদের চাল না দিয়ে নিজস্ব স্বজন বা অন্যের নামে চাল আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগে উঠে এসেছে।
প্রতিনিধিদের মাঝে বলে চাওয়া হয়, চাওড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ৬৪২ জন জেলের মধ্যে কিছু জেলে চাল পেয়েছেন, কিন্তু অনেকের চাল পাওয়া হয়নি। অভিযোগকারীরা বলছেন, চাল না পেয়ে তারা আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারে কাছে অভিযোগ দেন। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খাঁন তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন, যার উপ-নির্দেশক হিসেবে থাকছেন উপজেলা কৃষি অফিসার। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন মেরিন ফিসারিজ কর্মকর্তা অলিউর রহমান এবং ফ্যাসিলেটেটর মাইনুল ইসলাম। তদন্তের জন্য ১৫ কার্যদিবসের সময় দেওয়া হয়েছে।
ইউপি সদস্যরা অভিযোগের বিষয়ে বলছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হারুন বয়াতি তালিকা তৈরি করে চাল বিতরণ করেছেন, তবে কোন অনিয়ম হয়নি। তারা বলেন, যারা অভিযোগ করেছেন, তারা তালিকাভুক্ত জেলে না। অন্যদিকে, কয়েকজন জেলে জানান, তারা চাল না পেয়ে ফিরে এসেছেন, এবং চেয়ারম্যানের এই বক্তব্য আসলে চাল পায়নি এমন সত্যতা যেখানে রয়েছে। কিছু স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, চেয়ারম্যানের লোকজন চালের তালিকা তৈরি করতে টিপসহি ব্যবহার করে থাকেন।
অপর দিকে, চাওড়া ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) হারুন বয়াতি বলেন, ‘মাস্টার রোল তৈরি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে, এতে কোনও অনিয়মের সুযোগ নেই।’ তিনি আরও দাবি করেন, অভিযোগকারীরা তালিকাভুক্ত জেলে নয়।
উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাসেল জানিয়েছেন, ‘আমার কাছে এখনো কোনো তদন্তের চিঠি পৌঁছায়নি। তবে, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তদন্ত করা হবে।’
অন্যদিকে, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার বলেন, ‘জেলেরা চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে আমাদের দপ্তরে এসেছিল। পরে তাঁরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে অভিযোগ দেন। ইউএনও মহোদয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন, যারা ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। তিনি এও জানান, উপজেলার নিবন্ধিত ৬ হাজার ৯৬৯ জন জেলেদের জন্যই এই চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।’






