বাংলাদেশের রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) রাজবাড়ীর কার্যালয় দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সেখানে দালাল ছাড়া কোনো কাজই হয় না। এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দুদক অভিযানে রাজবাড়ী বিআরটিএর কিছু অসাধু কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করলেও তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার তাদের দুর্নীতিমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। চাহিদামতো অর্থ আদায় হওয়া পর্যন্ত কোনো ফাইল এগোয় না। সাধারণ সেবাগ্রহীতাদের জন্য এখানকার কাজ মানে দুর্ভোগের সীমা নেই। টাকা নেওয়ার পরও কাজ না হলে অর্থ ফেরত দেওয়া হয় না, আর প্রতিবাদ করলেই দালালগোষ্ঠীর হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়। এটি যেন নিয়মিত ঘটনা। তবে প্রশাসনের দৃষ্টিতে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি উপেক্ষিত।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসে সংঘটিত এক ঘটনার বিষয়ে জানা যায়, সেখানে সিল কন্ট্রাক্টর মো. আকরামুজ্জামান টাকা দিয়ে কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তার ওপর হামলা চালানো হয়। রাজবাড়ী সদর উপজেলার গৌড়াদিঘি এলাকার মো. সুমন শেখ অভিযোগ করেন, এক বছর আগে সাড়ে আট হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন কাগজের জন্য। সোমবার সকালে তিনি আসেন, কাগজ নেওয়ার জন্য। আকরামুজ্জামান তখন ব্যাংকের স্লিপ টিকতে চায়, না দেওয়ায় তাকে থাপ্পর মারেন। প্রতিবাদে গেলে তার সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন তার উপর হামলা করে। বলে অভিযোগ, টাকা দিয়ে কাজ না হলে কেন এত ভয়, তারও বিচার চেয়েছেন তিনি।
আরেক ভুক্তভোগী মো. বিল্লাল হোসেন জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অভিযোগ ছিল কোথায় কি হয় তা দেখানোর। আকরাম হোসেন ৮ হাজার টাকা দাবি করেন। তিনি ৬ হাজার টাকা দেন, তারপরও দুই বছর ধরে তিনি প্রতারিত হচ্ছেন, কাজে কিছু হচ্ছে না।
জানাগেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য এই দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগের আলোকে ৭ মে দুদক রাজবাড়ী অফিসের অভিযান চালায়। ওই অভিযানে দালালচক্রের মূলহোতা, রাজবাড়ী বিআরটিএর সিল কন্ট্রাক্টর আকরামুজ্জামান, আশিক খান, লিয়াকত আলী ও মানছুর আহমেদসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুদক ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজ জানান, তাদের কাছ থেকে মোট ৭২ হাজার ৪২০ টাকা উদ্ধার করা হয়, যা নিয়মিত মামলা করে কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা জানাচ্ছেন, রাজবাড়ীর বিআরটিএ অফিসে কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আসা সাধারণ গ্রহীতাদের ভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি এবং অর্থ জোরপূর্বক আদায় করা হচ্ছে। দালাল সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আক্রামুজ্জামানসহ তার সহযোগীরা প্রতিটি এলাকায় চলে দালাল ব্যবসা, যেখানে লাইসেন্সের জন্য অনাগ্রহী বা অযোগ্য গ্রহীতাদেরকে সরাসরি ফেল করানো হয়। মানুষের অভিযোগ, এই সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ লাইসেন্স পেতে গেলে তাদের হয়তো মারধর বা হয়রানি করা হয় এবং টাকার পরিমাণ ১০ হাজারের কাছাকাছি থেকে ২০ হাজার পর্যন্ত ওঠে।
এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন অসম্ভব করে তুলছেন সংশ্লিষ্ট কিছু দালালচক্র। একজন ভুক্তভোগী বলেন, আমি তিনবার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দিয়েছি, তিনবারই ফেল করেছি। এরপর দালাল একটি বড় অংকের টাকা নিয়েছে, এখন প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল, কাজ হচ্ছে না, আবার টাকাও ফেরত পাচ্ছি না। টাকাগুচ্ছের জন্য তারা হুমকি দেয়।
অভিযোগের ভিত্তিতে, রাজবাড়ী বিআরটিএর অপকর্মের প্রতিবাদের ঢাল হিসেবে গড়ে উঠেছে আক্রামুজ্জামান গড়ে তোলা সম্পত্তির বড় বড় বাড়ি ও গাড়ির বহর। তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অভিযুক্ত আক্রামুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজবাড়ী বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, আكرামুজ্জামান বিআরটিএর কেউ নয়, তিনি বহিরাগত। তবে ওই ঘটনায় আরও নিরপেক্ষ তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।






