জয়পুরহাটে খননের প্রায় তিন বছর পার হয়ে গেলেও চিরি নদী আবারো ভরে যাচ্ছে কচুরিপানে। নদীর আশেপাশের কিছু অংশে পানি থাকলেও বেশিরভাগ এলাকায় পানি অনুপস্থিত এবং কোথাও কোথাও সম্পূর্ণ শুকনো। এই পরিস্থিতি দেখে নদী খননের মূল উদ্দেশ্যগুলি যেমন সেচ সুবিধা, বন্যা রোধ এবং নৌ যোগাযোগের উন্নতি প্রতিফলিত না হয়ে প্রতিনিয়ত ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে।
নদীর দুইপাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা এবং নদী আন্দোলনের নেতারা বলেন, অব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত খনন এবং পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের কারণেই নদীটি আবারো ভরাট হচ্ছে। অতীতের মতো আবারও নদীতে বর্জ্য ফেলা, মাটির অপচয় এবং কচুরিপানার আগ্রাসন এই সংকটের প্রধান কারণ। তারা দ্রুত নদীর রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় আনার দাবি জানান।
জয়পুরহাট জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত চারটি নদীর মধ্যে চিরি নদীটি আক্কেলপুর থেকে সদর পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ। ২০১৯ সালে ১২১ কোটি টাকার মোট খরচে চারটি নদীর খননকাজ শুরু হয় এবং ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল সেচের সুবিধা বৃদ্ধি, পানি ধারণের ক্ষমতা উন্নয়ন, বন্যা প্রতিরোধ, নদীর পুনরুজ্জীবন, নৌ চলাচল সহজতর করা ও পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন। তবুও, বাস্তবে এই লক্ষ্যের অনেকটাই সাধিত হয়নি।
নদী খননের পর দেখা গেছে, গড়ে সারা বছর পানি থাকার আশা থাকলেও মৌসুমের ফলেসপ্তাহে প্রয়োজন অনুযায়ী পানি দেখা যায় না। বাঁধ থেকে মাটির অপচয়, অব্যবস্থিত সাফাই কাজে জমে থাকা কচুরিপানা এবং ময়লায় নদীর ব্যবহার্যতা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে নদীটি ক্রমশ নাব্যতা হারাচ্ছে। সচেতন মহল এই সংকট মোকাবিলার জন্য তৎপর হয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, খননের আগে আমাদের বাড়ির কাছে চিরি নদীতে বেশ পানি থাকতো, যা আমাদের সকল কার্যক্রমে ব্যবহার হতো। কিন্তু খননের পর থেকে আর নদীতে পানি নেই, বরং নদী ভরাট হওয়ার জন্য নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে, রমজান আলী মনে করেন, ছোট বেলায় নদীতে মাছ ধরা ছিল তার পরিবারের জীবিকা। কিন্তু এখন নদী বিমূঢ় হয়ে পড়ে গেছে, মাছ ধরা ও গোসল খরচে অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেছে। নদীর পানি না থাকায় মাছের প্রবাহ বন্ধ, ক্ষতি হচ্ছে স্থানীয় অর্থনীতির।
সদর উপজেলার কুঠিবাড়ী ব্রিজের পাশের দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের পরও নদীতে পানি না থাকা এবং নদীর রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা এই প্রকল্পের মূল ব্যর্থতা।
জয়পুরহাটের পরিবেশ আন্দোলনের সমন্বয়ক লুৎফুল্লাহিল কবির আরমান বলেন, চিরি নদীর খনন পুরোপুরি পরিকল্পনার অভাবে হয়েছে। খননকালে নদীর পাড়ে থাকা মাটি ও বালু পরে আবারো নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে, ফলে নদীর স্বাভাবিক ধারায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। এই সব অপচয়জনক খরচ ও অসম্পূর্ণতা থেকে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, সরকারের দায়িত্ব ও সচেতনতা জোরদার করে নদীর পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াদুল ইসলাম বলেন, ১২০ কোটি ৬৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকার বরাদ্দে চারটি নদীর খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর দ্বারা বন্যার ঝুঁকি কমে এসেছে এবং কিছুটা নদীর জলাধার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, বড় নদীর সঙ্গে সংযোগ না থাকায় পানি প্রবাহ সীমিত হচ্ছে। তিনি জানান, কচুরিপানা সরানোর জন্য কাজ অব্যাহত আছে এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেয়া হবে।






