বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় ও সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই স্বীকৃতি ও অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখছেন বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী। এ সম্পর্কে বাংলাদেশের বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানিয়েছেন, এখনই বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তিনি বলেন, সরকার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিবেশকে বিনিয়োগবান্ধব করতে বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি দ্রুত প্রবৃদ্ধি লাভ করছে এবং বিনিয়োগের আধার আরও সুদৃঢ় হচ্ছে।
মঙ্গলবার সিউলের পুলম্যান অ্যাম্বাসেডর হোটেলে ‘গেটওয়ে টু গ্রোথ: ইনভেস্ট ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক বিনিয়োগ সেমিনারে অংশ নেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। এ সময় তিনি নেতৃত্ব দেন একটি উচ্চপর্যায়ের সরকারি প্রতিনিধিদলের, যারা কোরিয়ান ব্যবসায়ী, শিল্প নেতা ও উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এই সেমিনারটিকে বিশ্বের বিভিন্ন বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় বাজারের দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় বাংলাদেশ দূতাবাস এবং ফেডারেশন অব কোরিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের (এফকেআই) যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই ইভেন্টে অংশ নেন ১৫০টির বেশি কোরিয়ান উদ্যোক্তা। বর্তমান সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের পঞ্চম বৃহত্তম বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশ। দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলো টেক্সটাইল, জুতা, ইলেকট্রনিকস এবং অটোমোবাইলসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় ১.৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এখনই উৎকৃষ্ট সময়, কারণ দেশের সরকার বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির অংশ হওয়ার জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে স্বাগত জানান।
বিডার ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি বিষয়টি তুলে ধরেন যে, বাংলাদেশের টেক্সটাইল, ইলেকট্রনিকস, অটোমোবাইল ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতসমূহ দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। তিনি বলেন, জনসংখ্যার সুবিধা, উন্নত অবকাঠামো এবং স্থিতিশীল অর্থনীতি বিনিয়োগকারীদের জন্য তরতাজা সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সহকর্মী ইয়ংওয়ান করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট মিন-সুক লি বাংলাদেশে তাদের প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানান, গত চার দশকে তারা বাংলাদেশে ৬০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং প্রায় ৩০,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন দ্রুত অগ্রসরমান একটি বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্র।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তৌফিক ইসলাম শতিল, যিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকার ও বিডার সাহসী ও প্রগতিশীল সংস্কার উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন বিনিয়োগের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। তিনি কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের এই সুযোগ গ্রহণে আহ্বান জানান।
ফেডারেশন অব কোরিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী চ্যাং-বিওম কিম বাংলাদেশের সঙ্গে কোরিয়া সম্পর্কের দীর্ঘ ৫০ বছরের ঐতিহ্যের প্রশংসা করেন এবং বলেন, দ্বিপাক্ষিক ‘কোল্যাবোরেটিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট’ (সিইপিএ) আলোচনা শেষ হলে উভয়ের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও গভীর হবে।
উল্লেখ্য, এই পাঁচ দিনব্যাপী কৌশলগত সফরে বিডার নেতৃত্বে আছেন নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, לצד অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ব্যাংক খাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
সেমিনারের পর এই প্রতিনিধি দলটি কোরিয়ার শীর্ষ সংবাদমাধ্যম, সংসদ সদস্য ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়াও প্রবাসী কোরীয় ব্যবসায়ী ও একাডেমিক ব্যক্তি ও সংগঠনের সঙ্গে বিশেষ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।






