ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের বিখ্যাত ল্যুভর জাদুঘর থেকে চুরির শিকার হওয়া ঐতিহাসিক অলংকারের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৮ কোটি ৮০ লাখ ইউরো। এটি বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এই তথ্য জানিয়েছেন জাদুঘরের কিউরেটর এবং ফ্রান্সের একজন সরকারি কৌঁসুলি। কৌঁসুলি বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বলেন, এই অলংকারগুলোর মূল্য অঙ্কটা অত্যন্ত বড়, তবে এর চেয়েও বেশি ক্ষতি হয়েছে ফ্রান্সের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উপর। জানা গেছে, চুরি হওয়া সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে রাজকীয় অলংকার, মূল্যবান উপহারসহ নেপোলিয়ন সম্রাটের বিভিন্ন স্মারক। বিশেষ করে তার স্ত্রীর জন্য উপহার হিসেবে দেওয়া ছিল হীরা, পান্না ও টিয়ারা, যা ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। গত রোববার সকালে জাদুঘর খোলার কিছুক্ষণ পরই একদল চোর প্রকাশ্য দিবালোকে আধুনিক বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে মাত্র আট মিনিটের মধ্যে এটি সম্পন্ন করে পালিয়ে যায়। চুরির দুদিন পরেও তারা ধরা পড়েনি, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে তদন্তকারীরা। মনে করা হচ্ছে, গয়নাগুলো ইতোমধ্যে ধ্বংস বা পাচার হয়ে গেছে। প্রসিকিউটর বেকো বলেন, গয়নার আসল মূল্য公開 করার উদ্দেশ্য হলো চোরদের নিরুৎসাহিত করা, যেন তারা সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত বা বিক্রির জন্য অপসারণ না করে। যদি তারা মজুত করা গয়নাগুলো গলানো বা বিভক্ত করার মতো ভয়ঙ্কর ভুল করে, তাহলেও তারা অর্থের পুরো অংশ পাবে না। চুরি হওয়া সামগ্রীর মধ্যে ছিল সম্রাট নেপোলিয়নের স্ত্রীর উপহারের হীরা ও পান্নার হার, তার স্ত্রী ইউজেনির পরা টিয়ারা এবং রাণী মেরি-অ্যামেলির মালিকানাধীন অন্যান্য মূল্যবান অলংকার। তদন্তে দেখা গেছে, চোরদের পালানোর পথে ইউজেনির ক্ষতিগ্রস্ত সেটি উদ্ধার করা হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে, পালানোর সময় তাড়াহুড়োয় সেটি পড়ে গিয়েছিল। চারজন মুখোশধারী ডাকাত একটি বিশেষ ট্রাক ব্যবহার করে সেন নদীর পাশে অবস্থিত গ্যালারি দ্য আপোলন থেকে প্রবেশ করে। ট্রাকের মধ্যে ছিল যান্ত্রিক লিফট, যার মাধ্যমে তারা প্রথম তলার কাচের জানালা কেটে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর তারা নিরাপত্তা রক্ষীদের হুমকি দিয়ে জাদুঘরটি খালি করে দেয়। পালানোর সময় তারা ট্রাকটির আগুন দেওয়ার চেষ্টা করলেও এক কর্মচারী তা প্রতিহত করেন। পরে দেখা যায়, চোরেরা স্কুটারে চেপে পালিয়ে যায়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এই চুরিকে দেশের ঐতিহ্যের ওপর আঘাত বলে উল্লেখ করেছেন। ঘটনার পরে দেশের সব সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ল্যুভরের তিনটি কক্ষে সিসিটিভি নয় এবং অপার অস্ত্রআরম ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। ফরাসি বিচারমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানাঁ স্বীকার করেছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, চোররা যেভাবে পরিবর্তনশীল ট্রাক ব্যবহার করে জাদুঘরে প্রবেশ করে, সেটি ফ্রানের ভাবমূর্তির জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি পেশাদার দল দ্বারা সংগঠিত একটি সুচিন্তিত চুরি, যেখানে চুরি হওয়া সামগ্রী সম্ভবত ইতোমধ্যে ধাতু ও রত্ন ভেদে পাচার করে বিক্রি করা হয়েছে এবং মূল্যের খুব ছোট অংশের বিনিময়ে বিক্রয় হয়েছে। তদন্তকারীরা সতর্ক করেছেন, এক বা দু’ দিনের মধ্যে গয়নাগুলোর অর্ধেক বা ততপর দাবানলের মতই হারিয়ে যেতে পারে।