লালমনিরহাটে সম্প্রতি ধানের খড়ের দাম হঠাৎই বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কৃষকদের জন্য সুখবর হলেও খামারিদের জন্য বিপদ ডেকে এনেছে। মৌসুম শেষে ধান কাটার পর অবশেষে কৃষকেরা সংরক্ষণ করে রাখা খড়গুলো অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন। এসব খড় তারা পাইকারদের কাছে বিক্রি করে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করছেন। তবে, এ লাভের পিছনে রয়েছে খামারিদের বড় চিন্তা—খড়ের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য এখন গবাদিপশুর খাদ্য সংগ্রহে বাধা সৃষ্টি করছে।
গবাদিপশুর মূল খাদ্য হিসেবে ধানের খড় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ১০০ আঁটি খড় বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়, যা কিছুদিন আগেও ছিল মাত্র ৩ থেকে ৪ টাকা। এখন ১ হাজার আঁটির দাম দাঁড়িয়েছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকারও বেশি। এর মানে, কিছুদিন আগে প্রতি আঁটির দাম ছিল অপ্রতিষ্ঠিত, এখন সেটি হয়ে গেছে কয়েকগুণ বেশি। কিছু স্থানীয় খামারির আশঙ্কা, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রতি আঁটির দাম আরও বাড়ে ৯ থেকে ১০ টাকাতে পৌঁছাতে পারে। তবে শুধু খড়ে না, ভুসি, চালের গুঁড়া ও অন্যান্য পশুখাদ্যের দামও বেড়ে গিয়েছে, যা গবাদিপশু পালনকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, ধানের খড় গরুর প্রধান খাদ্য উপাদান। সাধারণত খড় কেটে ভাগ করে ভুসি ও চালের গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে গবাদিপশুকে খাওয়ানো হয়, যা তাদের পুষ্টি ও বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। ফলে, কৃষকরা পুরো বছর ধরে খড় সংরক্ষণ করে থাকেন। সম্প্রতি খড়ের সংকট ও উচ্চমূল্য তাদের খাদ্য সরবরাহে बाधা সৃষ্টি করেছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের কৃষক আবু সালাম আলী জানান, তার গরুর জন্য দুইটি বাছুর ও একটি গরু আছে। আগে প্রতিটি আঁটি খড় তিনি ২-৩ টাকায় কিনতেন, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ টাকায়। তিনি বলেন, ‘এমন দামে খড় কিনে গরু পালন করতে খুব কষ্ট হচ্ছে, বিক্রিও করতে পারছি না।’
তিস্তা পাড়ের কৃষক আব্দুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েক মৌসুমে খড়ের সংকট আরো বাড়ছে। আগে ধান কাটার সময় খড় অক্ষত থাকত, তবে এখন আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ধান কাটাই ও অপ্রত্যাশিত বন্যার কারণে অনেক খড় নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থার অব্যাহত থাকলে দুধ ও মাংসের উৎপাদনেও ক্ষতি হবে।’
অন্যদিকে, পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি তিন বিঘা জমিতে থেকে মোট ৩,৬০০ আঁটি খড় সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতি আঁটি আমি ৬ টাকায় বিক্রি করেছি, ফলে মোট পেয়েছি প্রায় ২১,৬০০ টাকা। ধানের পাশাপাশি খড়ের ভাল দাম দেখে আমি 매우 সন্তুষ্ট।’
বড়বাড়ী বাজারের খুচরা বিক্রেতা ইব্রাহিম আলী বলেন, ‘মৌসুমে আমি গ্রাম থেকে খড় কিনি ২-৩ টাকায়। এখন দাম বেড়ে গেছে, আমি লাভ করতে পারছি। এ ব্যবসায় আমি ভালো আয় করছি।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘খড়ের দাম বেড়ে কোন একদিকে লাভবান হলেও অন্যদিকে খামারিরা সমস্যায় পড়েছেন। উন্নতমানের ঘাষ ও খড় সংরক্ষণের Sঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে তারা খরচ কমাতে পারবেন। এতে গবাদিপশুর পুষ্টি ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত হবে এবং দুধ ও মাংসের উৎপাদন বাড়বে।’






