দেশের শহর ও নগর এলাকার সুবিধা–সুবিধা উন্নয়নের অংশ হিসেবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্য প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের পরিকল্পনা করেছে। এই অর্থের মাধ্যমে দেশটির উপকূলীয় ২২টি শহরে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাস্তবায়িত হবে।
এডিবির অর্থায়নে এই প্রকল্প দুটি হলো—একটি হলো ক্লাস্টার টাউনস ওয়াটার সাপ্লাই ও স্যানিটেশন, আর অন্যটি হলো নগর অঞ্চল উন্নয়ন। এ উদ্দেশ্যে চলতি বছরের মধ্যে মোট ১৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন পাইপলাইনে রয়েছে, যা প্রধানত উপকূলীয় শহরগুলোতে পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবে। এর আওতায় সচেতনতা বৃদ্ধি, পানি পরিশোধন সুবিধা, বিতরণ নেটওয়ার্ক এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করা হবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে জানা গেছে, এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো পানি সরবরাহের মানোন্নয়ন, স্যানিটেশন ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা। মানচিত্র বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সমীক্ষাও চালানো হচ্ছে, যেখানে পানির উৎস, পরিশোধন সুবিধা, বিতরণ নেটওয়ার্ক ও স্যানিটেশন সিস্টেমের অবস্থা বিশ্লেষণ করা হবে।
এছাড়া, ২০২৭ সালে ১৫০ মিলিয়ন ডলার আরও বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে, যা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বাস্তবায়ন করবে। এই অর্থায়নে ময়মনসিংহ সিটি রিজিয়ন (এমসিআর) এবং রাজশাহী সিটি রিজিয়নকে ৩য় নগর উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় টেকসই নাগরী ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলা, প্রাকৃতিক ভিত্তিক সমাধান অনুসরণ, রাস্তাঘাট, বাস টার্মিনাল, মার্কেট ও কাঁচাবাজারের উন্নয়ন, আরও আধুনিক ও উদ্ভাবনী অর্থায়নের মাধ্যমে পৌর সুবিধা বাড়ানো হবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে জলবায়ু সম্পর্কিত ঝুঁকি কমানো, অংশগ্রহণমূলক নগর পরিকল্পনা ও টেকসই সেবা নিশ্চিত করা যাবে।
বিশেষ করে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে এমসিআর এবং আরসিআর জন্য সমন্বিত সিটি রিজিয়ন পরিকল্পনা (সিসিআরপি) এবং উন্নয়ন নির্দেশিকা তৈরি করা হবে। এর সঙ্গে থাকবে আঞ্চলিক সংযোগ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনাসহ অতিরিক্ত থিম্যাটিক স্তর।
বর্তমানে পটুয়াখালী পৌরসভা ও খুলনার চালনা পৌরসভায় প্রকল্প পরিদর্শনের সময় এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং বলেছিলেন, এই প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপ কাজ চলছে। তিনি জানিয়েছেন, এডিবির সঙ্গে এলজিইডির ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা এগিয়ে যাচ্ছে এবং ভৌগোলিক এলাকা ও উপ-প্রকল্পগুলো নিয়ে কাজ চলছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহকারী সংস্থা হিসেবে এডিবি গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ২.৫২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদান করেছে এবং আরও ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এডিবির মোট প্রকল্প পোর্টফোলিও বর্তমানে প্রায় ১১.৮ বিলিয়ন ডলার, যেখানে চলমান রয়েছে ৫১টি প্রকল্প। ১৯৭৩ সাল থেকে এডিবি বাংলাদেশকে সুবিধা দিতে শুরু করে, বিভিন্ন খাতে মোট ৩৩.৯৫১ বিলিয়ন ডলার ঋণ ও ৫৭১.২ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে।






