সংবিধান সংস্কার ও বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আবারো জাতীয় নির্বাচনের দিন বা তার আগে একটি গণভোটের প্রস্তাব দিয়েছে। এই সুপারিশ অনুযায়ী, সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হলে জুলাই সনদ অনুযায়ী কর্মগ্রহণ করতে হবে, তবে আগামী নির্বাচনের তারিখ বা তার আগের দিনেই এই গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কমিশন।
মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এর আগে, দুপুর ১২টার দিকে, জুন মাসে সই হওয়া সনদ কার্যকর করার জন্য উপায়ে আলোচনা করেন। এই সময়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে একটি প্রস্তাবনা হস্তান্তর করা হয়, যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ বা বিতর্কিত বিষয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণভোটের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এখনো তা কার্যকর। গণভোটের মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য এতে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয়েছে। তিনি জানান, সরকারকে বলা হয়েছে যেন তারা সংসদের নির্বাচনের তারিখ বা তার আগের দিনেই এই গণভোট সম্পন্ন করে এবং এর জন্য একটি সংশ্লিষ্ট তফসিল তৈরি করে। এটি চালু করার জন্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও আলোচনা করতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, Juli সনদ যেন আইনি ভিত্তি পায়, এবং গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের জন্য政治 দলগুলোর অঙ্গীকার পরিপূর্ণ অঙ্গীকার হিসেবে স্বীকৃত। ঐকমত্য কমিশন তিনভাগে সুপারিশ দিয়েছে, প্রথমত, সাংবিধানিক নয় এমন বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের জন্য সরকার যেন অধ্যাদেশের মাধ্যমে উদ্যোগ নেয়। দ্বিতীয়ত, অন্যান্য বিষয়ে সরকারি নির্দেশ বা অফিস আদেশে দ্রুত বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।
তৃতীয়ত, সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আইনগত ভিত্তি পেতে এবং বাস্তবায়নের জন্য দুটি বিকল্প হলো: এক, সরকারের আইনি উদ্যোগে বিল প্রস্তুত করে তা গণভোটে নেওয়া; দুই, যদি সংসদ তা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকার একটি খসড়া বিল তৈরি করে সেটি গণভোটে পাঠাবে। ভোটে পাস হলে তা সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে। এছাড়াও, ভোটের সংখ্যার ভিত্তিতে ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার জন্য জনমত অপ্রয়োজনীয় হলে, সংশোধনের মাধ্যমে এটি সরকার বাস্তবায়ন করবে।
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে উপজেলা পর্যায়ে আদালত সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের জনবল ও অবকাঠামো উন্নয়ন, বিচারপ্রক্রিয়া ডিজিটাইজেশান, আইনজীবীদের আচরণবিধি আধুনিকীকরণ, স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন, নতুন প্রশাসনিক বিভাগ স্থাপন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কৌশল প্রণয়ন, ও সরকারি সেবা অটোমেশন ও ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপে যুক্ত হওয়ার নীতিমালা।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সরকারের অঙ্গীকার ও রাজনৈতিক সমঝোতা দৃঢ়, এবং এই প্রক্রিয়া জনগণের মতামত উপেক্ষা না করে এগিয়ে নেওয়া হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই পদক্ষেপগুলো জাতীয় সংকট সমাধানে সহায়ক হয়ে উঠবে এবং দেশের সার্বভৌম ও সামাজিক স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।






