সোমবার এশিয়ার শেয়ারবাজারে প্রবল উর্ধগতি দেখা গেছে, কারণ বিনিয়োগকারীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। আলোচনায় ইতিবাচক ফলাফল প্রত্যাশিত হওয়ায় বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বাণিজ্য বিরোধের অবসান হওয়ার সম্ভাবনা জাগরণে সাহায্য করেছে। সপ্তাহান্তে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট ঘোষণা করেন, চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি এখন কার্যত কেটে গেছে। তিনি আরও জানান, তাদের দেশ শুল্ক এড়ানোর উপায় খুঁজে বের করেছে। পাশাপাশি, চীন তাদের বিরল মৃত্তিকা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে বিলম্ব করতে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সয়াবিন ক্রয় করতে রাজি হয়েছে। অন্যদিকে, চীনের ভাইস প্রিমিয়ার হে লাইফেং বলেন, উভয় দেশ শুল্ক, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এবং ফেন্টানাইল সহযোগিতার বিষয়ে প্রাথমিক ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তিনি এই আলোচনা ‘স্পষ্ট, গভীর ও গঠনমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন। এর ফলে আসন্ন বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (APEC) শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি চীন পিংয়ের বৈঠকের সম্ভাবনা অনেকটাই সুগম হয়েছে। ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর এটি হবে দুই নেতার প্রথম মুখোমুখি আলোচনা। এই অগ্রগতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়িয়ে দিয়েছে, যা সোমবার সকাল থেকে এশিয়ার বিভিন্ন শেয়ারবাজারে প্রতিফলিত হয়েছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার বাজার প্রায় দুই শতাংশ বেড়ে যায়, যা তারা সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম মাইলফলক। হংকং, সাংহাই ও তাইপেইর বাজারগুলোও ঊর্ধমুখী বিনিয়োগের প্রবণতা দেখাচ্ছে। গত শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিটের শক্তিশালী লেনদেনের পর এশিয়ার বাজারেও ইতিবাচক মনোভাব রয়ে গেছে। মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির সাম্প্রতিক তথ্য ফেডারেল রিজার্ভকে সুদের হার কমানোর দিকে আরও ভালোভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়িয়েছে। রোববার কুয়ালালামপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘তারা (চীন) একটি চুক্তি করতে চায়, আমরাও চাই।’ বর্তমানে তিনি পাঁচ দিনব্যাপী এশিয়া সফরে রয়েছেন, যেখানে মালয়েশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা অগ্রাধিকার পেয়েছে। এই অগ্রগতি ও আশা নির্দেশ করে যে, বৈশ্বিক বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে তামার ভবিষ্যৎমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী শিল্প ও নির্মাণশিল্পের চাহিদার আনুকূল্য দেখিয়ে দেয়। কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে থাকলেও, শেষের এই অগ্রগতি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের বিরল মৃত্তিকা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে চলমান শুল্ক বৃদ্ধির হুমকির প্রেক্ষিতে, এই সমঝোতা অশেষ উপকারে আসতে পারে। মার্কিন ট্রেজারি সচিবের ভাষায়, ‘চুক্তির তারিখ অনুযায়ী, চীন এক বছরের জন্য তার বিরল মৃত্তিকা নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখবে, এরপর পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। এই অগ্রগতির বাস্তব রূপ নেওয়া যদি সম্ভব হয়, তবে তা শুধু দুদেশের জন্য নয়, বরং পুরো এশীয় অর্থনীতির জন্যই ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে।






