আবারও ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়েছেন ব্রাজিলের তারকা ফুটবল তারকা নেইমার। তার সামনে দুটি প্রধান বিকল্প রহস্যময়ভাবে উপস্থিত। প্রথমত, তিনি কি বর্তমান ক্লাব সান্তোসে থেকে যেতে চান, যেখানে তিনি দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন। অন্যদিকে, তিনি কি মনোযোগ দিলেন মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) দল ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনায়, যেখানে তার পাশে থাকবেন তার দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজ। ফুটবলপ্রেমীরা বিশেষ করে মায়ামিতে নেইমারকে দেখতে বেশি আগ্রহী হবেন, কারণ এতে আবার দেখা যাবে এই আর্জেন্টাইন তারকাদের সঙ্গে মেসি ও সুয়ারেজের ফুটবল যোদ্ধা উত্তেজনা। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নেইমারকে অবশ্যই নিজের ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করতে হবে এবং সেটি এই বছর শেষ হওয়ার আগে সম্পন্ন করতে হবে। এ বছরের জানুয়ারিতে তিনি আবার ফিরেছেন নিজের শিকড় সান্তোসে, কারণ বেশি চোটে ভুগছিলেন। নানা চোটের কারণে ক্লাব এবং জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত খেলতে পারেননি, ফলে সৌদি আরবের আল হিলাল তাকে মুক্ত করে দেয়। এরপর ৩৩ বছর বয়সি এই তারকা ফিরে আসেন ব্রাজিলে। কিন্তু ঘরের মাঠেও তিনি সুখ খুঁজে পাননি। তার ক্লাব সান্তোস বর্তমানে অবনমনের লড়াইয়ে লিপ্ত। তার নিজের অবস্থাও বেশ কঠিন, কারণ চোটের কারণে এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি, হ্যামস্ট্রিংয়ে চোটের জন্য মাঠের বাইরে রয়েছেন। ব্রাজিলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে তিনি আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বকাপের জন্য আরো একবার পাদপ্রদীপের আলোয় ফিরে আসার আয়োজনে রয়েছেন। স্পোর্টস সংবাদ গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নেইমার হয়তো এখনই ভাবছেন পরবর্তী দলবদল কোন গন্তব্যে হবে, যেখানে তিনি আবার আলোচনায় আসতে পারবেন। এর মাধ্যমে ব্রাজিলের কোচ কার্লো আনচেলত্তিরও মনোভাব সম্পর্কে তার গুরুত্ব বোঝানো সহজ হবে। তবে সমস্যা রয়েছে। ইউরোপের বড় ক্লাবগুলো এখন তার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না। স্পোর্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইউরোপীয় ফুটবলের দরজা আপাতত নেইমারের জন্য বন্ধ।’ ফলে, বার্সেলোনা ও পিএসজির সাবেক এই ফরোয়ার্ড বুঝতে পারছেন, হয়তো পুরনো মঞ্চে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। বাস্তবতা এটাই— মাঠে যত সময় থাকেন, চোটের কারণে অনুপস্থিতি তার জন্য বেশি হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, সম্ভবত তার সময়ে শেষ হয়ে এসেছে। আল হিলালে খেলার সময়ে এসিএল চোটই তার বড় ক্ষতি করেছে। এই চোটের পর থেকেই নেইমার একপ্রকার হারিয়ে গেছেন। ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক এখন ক্ষীণ, তাই এখন তার সামনে দুটি প্রধান পথ খোলা থাকে। প্রথমত, সান্তোসের সঙ্গে আরও ছয় মাসের জন্য নতুন চুক্তি। দ্বিতীয়ত, মার্কিন মুলুকে পাড়ি দেওয়া। এমএলএসে খেলতে আগ্রহ রয়েছে তার। কারণ, সেখানে জীবনযাপন সহজ, সঙ্গে রয়েছে খ্যাতি ও বিনোদন উৎসব। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো লিওনেল মেসির সঙ্গে আবার খেলতে চান তিনি। সম্প্রতি মেসি ইন্টার মায়ামির সঙ্গে তিন বছরের নতুন চুক্তি করেছেন। পাশাপাশি, তার আরেক বন্ধু লুইস সুয়ারেজও এখন মায়ামিতেই। এত দিন ধরে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে আবার এই বন্ধুদের সঙ্গে খেলার স্বপ্ন দেখছেন নেইমার। কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘মেসি আর সুয়ারেজের সঙ্গে আবার খেলতে পারলে দারুণ লাগবে। ওরা আমার বন্ধু। এখনও নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। যদি আবার সেই ত্রয়ীর ফুটবল দেখা যায়, সেটি সত্যিই অসাধারণ হবে।’’ এখন দেখার অপেক্ষায় থাকবেন সবাই, নেইমার কোন পন্থা গ্রহণ করবেন। তবে একথা নিশ্চিত—তার নাম সর্বদা ফুটবল ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় অঙ্ক হিসেবে রয়ে যাবে—উজ্জ্বল, অসম্পূর্ণ, তবুও চিরদিনের জন্য স্মরণীয়।






