শীতের আগেই সিরাজগঞ্জের যমুনা নদী ও চলনবিলের নদী, খাল-বিল, জলাশয় ও পুকুরে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির আগমন শুরু হয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে সঙ্গে নিরাপদ আবাস ও প্রাচুর্যপূর্ণ খাদ্যসম্পদ থাকায় বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা। প্রশাসনের সক্রিয় উদ্যোগের মাধ্যমে এই ঈদপাখিদের অভয়ারণ্য রক্ষা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, শীতের আগেই তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে যেমন বস্তুল, উলিপুর, পঁওতা, সোলাপাড়া, দিঘীসগুনা, কুন্দইল, সগুনা ও লালুয়া মাঝিরা, মালশিন প্রভৃতি অঞ্চলে অতিথি পাখির উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় নানা ধরনের পাখি দেখা যায়, যা পরিবেশকে সুন্দর করে তুলেছে। পাখির মধ্যে রয়েছ বালিহাঁস, নীলশির, শামুকখোল, ত্রিশূল বক, রাতচরা, কোড়া, লালশির, বড় সরালি, ছোট সরালিসহ আরও অনেক প্রজাতি। এসব পাখি গাছে গাছে বাসা বাঁধছে এবং মাঠজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ডাহুক, গাঙচিল, বক, পানকৌড়ি, মাছরাঙা ও নানা ধরনের ছোট ও বড় পাখি। এক সময় চলনবিলের শিকারিরা পাখি শিকার করত, তবে বর্তমানে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিকারির সংখ্যা কমে এসেছে এবং অতিথি পাখির সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
তাড়াশের উলিপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, গত কয়েক বছর থেকে তুলনায় এই বছর চলনবিলের বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পাখির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সহজলভ্য খাবার ও আশ্রয়ের কারণে শীতের আগেই এই অরণ্যপূর্ণ অঞ্চলে পাখির আনাগোনা বেড়েছে, যা পূর্বপ্রতিদর্শনের থেকে অনেকটাই বেশি। পাখির ঝাঁক ও তাদের কিচিরমিচির শব্দে পরিবেশের রূপ বদলে গেছে।
তাড়াশের পঞ্চায়েত একতা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রাজু বলছেন, পাখি শিকার করা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও শিকারি বা ক্রেতাদের মধ্যে এই অপরাধের ভয়淡 নেই। আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে যাতে এই অঞ্চলে পাখি শিকার বন্ধ হয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষা সম্ভব হয়।
উপজেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, শীতের আসলে দেশের বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এই এলাকায় এসে থাকছে। বেশিরভাগ শিকারি রাতে এই বিশাল জলাভূমি এলাকায় অসাধু পদ্ধতিতে পাখি শিকার করে থাকেন। তবে প্রশাসন সচেতনতা ও নজরদারি বাড়ানোর জন্য কাজ করছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম নজরুল ইসলাম বলছেন, এ বছর চলনবিলের স্বাভাবিক বন্যা ও জলপ্রবাহের কারণে প্রচুর খাবার মজুদ হয়েছে। খাদ্য ও আশ্রয়ের প্রাচুর্য বালিহাঁস, শামুকখোল ও অন্যান্য পরিযায়ী পাখিকে এই এলাকায় আসতে উৎসাহিত করছে। ফলে এই বছর অন্য বছরের তুলনায় পাখির উপস্থিতি অনেক বেশি।
এদিকে, তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রশাসনের কার্যকর ব্যবস্থা নিলে এই অঞ্চলে অতিথি পাখির আগমন আরও বৃদ্ধি পাবে। পাখি শিকারির অবস্থান চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যা বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের আওতায় পরবে। যৌথ প্রচেষ্টায় এই প্রান্তের জীববৈচিত্র্য রক্ষা সম্ভভ হবে।






