চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রায় ছয় হাজার বন্দিকে অপরিষ্কার পানি দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। এই দূষিত পানি রন্ধন, গোসল এবং পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। বিষয়টি জানতে পেরেও পানি সংকটের অজুহাতে কারা কর্তৃপক্ষ বছর ধরে এই পানি ব্যবহার করে আসছেন। সূত্র জানায়, সম্প্রতি কারাগারের ১০টি পাম্পের পানির নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি পাম্পের পানি বিশেষজ্ঞরা খাওয়া ও ব্যবহার অনুপযোগী বলে জানিয়েছেন। তবে কারা কর্তৃপক্ষ অজুহাত দেখিয়ে এসব পানির বিকল্প উৎস নেই বলে দাবি করে আসছে। সেই কারণে এই দূষিত পানি দিয়ে কায়েদিদের জন্য রান্না, গোসল এবং অন্যপ্রকার খরচ চালানো হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র কারা পরিদর্শক মো. ইকবাল হোসেন এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, চার বছর ধরে কারাগারের পাইপলাইনে থাকা এই পানি ব্যাকটেরিয়া (কলেরা, টাইফয়েড, অ্যামিবিক আমাশয়, হেপাটাইটিস এ ও শিগেলোসিসের জীবাণু) দ্বারা সংক্রমিত হয়ে কায়েদিদের খাওয়া, গোসল ও বিস্তারের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে খুব দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হবে।
সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত কারাগারে বন্দি ছিল প্রায় ৫৭০০ জন। মাঝে মাঝে এই সংখ্যাটি ১০-১২ হাজারেও পৌঁছায়। কারাগারটি বিভিন্ন সময়ে এই সংখ্যক বন্দির জন্য ১০টি পানির পাম্প ব্যবহার করে আসছে। ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রিসেন্টের প্রতিনিধিদল এই পাম্পগুলো থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে, এর মধ্যে পাঁচটির পানিতে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন। তবে এইসব পানির ব্যবহার বন্ধের জন্য বর্তমানে কোনো পরামর্শ দেয়া হয়নি।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা কারাগারের ১০টি পানির পাম্পের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে ৯টির প্রতিবেদন পাওয়া গেছে, আর পাঁচটির পানির নির্মলতা ও ব্যবহার অনুপযোগিতা নিশ্চিত হয়েছে। এই পানিগুলোতে কলেরা, টাইফয়েড, অ্যামিবিক আমাশয়, হেপাটাইটিস এ ও শিগেলোসিসের জীবাণু পাওয়ায় এই পাম্পগুলো ব্যবহারে সাময়িক বিরত থাকবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ওয়াসার পানির লাইন ও টয়লেটের স্যুয়ারেজ লাইন কোথাও লিক বা ফোটা হয়ে যাওয়ায় বিষাক্ত মিশ্রণ সৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে এই দূষিত পানি তৈরি হচ্ছে।
ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলছিলেন, এই জীবাণুযুক্ত দূষিত পানি এবং খাবার খেলে কলেরা, টাইফয়েড, অ্যামিবিক আমাশয়, হেপাটাইটিসের মতো পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদে এই পানি পান করলে স্বাস্থ্যে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন পানিশূন্যতা, অঙ্গহানি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে কলেরা ও টাইফয়েডের কারণে মারাত্মক ডায়রিয়া ও পানিশূন্যতা দেখা যায়, যা কিডনি ও লিভার নষ্ট করে দিয়ে অকাল মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস জানান, এ বিষয়ে এখনো তাদের কাছ থেকে কারা কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো সংস্থা কোনও লিখিত নোটিশ পাননি। তিনি বলেন, লিখিত কোনও অভিযোগ বা নির্দেশ পেলে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগের চট্টগ্রাম ডিভিশনের পরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সম্প্রতি বিষয়টি গোপনে জেনেই পানি দূষণের কারণ ও উৎস অনুসন্ধানে কাজ শুরু করা হয়েছে। তিনি জানান, কারা নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক দায়িত্ব জেলা সিভিল সার্জন ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের। স্বাস্থ্য বিভাগ এই সমস্যা দ্রুত সমাধানে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।






