আশ্চর্য্যরূপে শক্তি ধারণ করে প্রবল ঘূর্ণিঝড় মেলিসা ক্যারিবীয় অঞ্চলের তিন দেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। গত বুধবার রাতে দক্ষিণ-পশ্চিম জ্যামাইকায় নিউ হোপের কাছে ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার গতিতে আছড়ে পড়ে এই ভয়ংকর হ্যারিকেন। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এটি জ্যামাইকায় ১৭৪ বছরে দেখা সবচেয়ে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানের মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করেছে এই মারাত্মক প্রাকৃতিক অঘটন।শুধু জ্যামাইকাই নয়, এই ঘূর্ণিঝড় ভয়ংকর প্রভাব ফেলেছে কিউবার পূর্বাঞ্চল ও হাইতির কিছু অংশেও। ঝড়ের তাণ্ডবে দুই দেশেই অসংখ্য গাছ উপড়ে গেছে, বিদ্যুতের খুঁটি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এর ফলে বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, আর অন্ধকারে ডুবে গেছে হাজারো মানুষ। তবে কিছু হাসপাতাল এখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে অনেক মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে যেখানে বড় ধরনের প্রাণহানির সম্ভাবনা এড়ানো গেছে।তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ধরনের ঘূর্ণিঝড় আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তারা মনে করছেন, এই হারিকেনটির শক্তি ক্যাটাগরি-৫-এপেঁ পৌঁছেছে এবং এটি কেবল জ্যামাইকাই নয়, পুরো ক্যারিবীয় অঞ্চলের জন্য বড় ধরনের মানবিক সংকটের সূচনা করেছে।জ্যামাইকায় প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস সতর্ক করে বলেছেন, দেশের পরিকাঠামো এই ধরনের শক্তিশালী ঝড়ের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত নয়, তাই তিনি সকল বাসিন্দাদের সাবধান থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত মেলিসার পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি, কারণ উদ্ধারকাজ অনেকটাই ধীরগতিতে এগোচ্ছে। অনেক মানুষ ঘরছাড়া, নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। এই সময়ে প্রায় ২৫,০০০ পর্যটক এই দ্বীপে অবস্থান করছিলেন। অনুটিক ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য অব্যাহত আছে। সংযুক্ত জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বার্বাডোজের একটি ত্রাণ শিবির থেকে প্রায় ২০০০ ত্রাণ সরঞ্জাম জ্যামাইকার উদ্দেশ্যে পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এটি ছাড়াও, কিউবা ও হাইতিসহ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশেও সাহায্য পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরের তাপমাত্রা বাড়ার কারণে এই ধরনের শক্তিশালী হারিকেনের উৎপত্তি হচ্ছে, যা ভবিষ্যতেও মানবিক সংকট বাড়াবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।প্রতক্ষ্য অঘটন না হলেও ভারি বর্ষণের কারণে হাইতিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাজধানী থেকে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত উপকূলীয় শহর পেটিট-গোয়াভেতে নদীর পানি উপচে পড়ে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে কমপক্ষে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১০ জন শিশু। এখনও ১২ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। কিউবানাও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে সেখানের সরকার বহু মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উদ্ধার কার্যক্রম ধীর গতি নিয়ে চলছে। বৃহস্পতিবার ভোরে এই ঝড় ক্যাটাগরি-২-এ পরিণত হয়েছে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০৫ মাইল। বর্তমানে এটি বারমুডার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে এই ঝড়ের কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে সরে যাওয়ার কারণে সব কার্যক্রম এখনো চলছে।
 
	    	






