বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনরুদ্ধার ও রেমিট্যান্স প্রবাহের অভূতপূর্ব বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে। এই ধারাবাহিক উন্নতি অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও আস্থার পুনরুজ্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য ফেরাতে সাহায্য করছে যেমন- বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা এবং দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য বেশ ইতিবাচক সূচক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ৩২.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এ পৌঁছেছে। তবে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) স্বীকৃত পদ্ধতি অনুযায়ী এই সংখ্যা কম করে ২৭.৩৫ বিলিয়ন ডলার। এই রিজার্ভ দিয়ে দেশের মোট আমদানি ব্যয় সাড়ে পাঁচ মাসের জন্য কভার করা সম্ভব, যা অর্থনীতির জন্য একটি স্বস্তিদায়ক চিত্র। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় ছয় মাসের আমদানি ব্যয় কভার করা আদর্শ হয়, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এই হিসেবে মোটেও উদ্বেগের বিষয় নয়।
অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহের অপ্রত্যাশিত বৃদ্ধি। ২০২৪ সালে, বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা আগের রেকর্ড অর্থবছর ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার থেকে অনেক বেশি। চলতি অর্থবছরেও এই প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। প্রথম তিন মাসে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছে ৭.৫৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ১৬.২৩ শতাংশ বেশি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হয়েছে এবং টাকার বিনিময় হারও স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপপরিচালক থমাস হেলব্লিং বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধিকে তিনি স্বাগত জানাচ্ছেন, কারণ এর মাধ্যমে দেশের লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই লক্ষণগুলো দেখায় যে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হচ্ছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার বিবরণী দেন, “অর্থনৈতিক সূচকগুলো এখন তুলনামূলকভাবে স্বস্তিদায়ক, তবে এখনও আরও সামান্য উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে।” অন্যদিকে, ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “রেমিট্যান্স প্রবাহের বৃদ্ধি রিজার্ভ পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এবং এখন ডলারের সংকট কিছুটা কমে আসছে।”
সরকারের প্রচেষ্টায় বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে থাকছে এবং বৈধ চ্যানেল ব্যবহারে প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে, প্রবাসীরা এখন আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করলে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা পাচ্ছেন। হুন্ডি ও অবৈধ চ্যানেলের বিরুদ্ধে অভিযান তীব্র হওয়ায়, এসব অবৈধ পদ্ধতিতে লেনদেন কমে আসছে। ব্যাংক ও বাজারের মধ্যে বিনিময় হারের পার্থক্য খুবই ছোট হয়ে এসেছে, ফলে প্রকৃত অর্থে দেশীয় অর্থনীতি অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে এসেছে।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ডিএমডি মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ বলেন, “নিরাপদ ও বৈধ অর্থপ্রবাহ নিশ্চিত করতে সরকারের পদক্ষেপ ও অভিযান অনুসরণ করে এখন প্রবাসীরা তাদের অর্থ পাঠাচ্ছেন ব্যাংকিং চ্যানেল মাধ্যমে বেশি করে। এতে দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আরও দৃঢ় হচ্ছে।”
প্রিমিয়ার ব্যাংকের ডিএমডি আব্দুল কায়উম চৌধুরী উল্লেখ করেন, “২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত হ্রাসের পর অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এটি স্বস্তির একটি সংকেত। এই পরিবর্তন দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”






