সরকারের তরফ থেকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মনে করে, অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে দেশের অস্থিতিশীলতা কাটবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। বর্তমান সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনীর সিনিয়র নেতাদের প্রতি সেনা সদস্যরা শতভাগ আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। সেনা সদর মনে করে, বর্তমানে সেনাবাহিনী আরও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, যা তাদের সাহস ও শক্তি বাড়াচ্ছে।
বুধবার ঢাকার সেনা সদর দপ্তরে সেনাবাহিনী আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সেনা সদর দপ্তরের নির্মাণ 안내 ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন শাখার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মনজুর হোসেন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের পর সেনানিবাসে ফিরে যাওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান বলেন, তিনি স্বেচ্ছায় এখনো কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দাঁড়িয়েছেন। আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হলে তারা সেনানিবাসে ফিরে যাবেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের জনগণের মতো সেনাবাহিনীও চায় একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, যার জন্য সময়ও নির্ধারিত হয়েছে। তিনি জানান, সেনাবাহিনী প্রত্যাশা করছে, নির্বাচন শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে এবং দেশের স্থিতিশীলতা আরও বাড়বে। এজন্য সেনারা সব সময় প্রস্তুত।
সেনা সদস্যদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে তিনি জানান, বর্তমানে সরকারের রূপরেখার অনুযায়ী প্রশিক্ষণ চলছে। তবে দীর্ঘ সময় সেনানিবাসের বাইরে থাকার কারণে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর গুজব ও অপপ্রচার চালানো নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেনারেল মাইনুর রহমান বলেন, সেনাবাহিনী কঠিন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করেছে এবং কিছু স্বার্থান্বেষী চক্র মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে সেনাবাহিনী ও তার নেতৃত্বকে question করছে। তিনি আশ্বাস দেন, সেনা সদস্যরা সবাই প্রধান ও সিনিয়র লিডারশিপের প্রতি এক বাক্যে আবদ্ধ। এখনকার পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও ঐক্যবদ্ধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মনজুর হোসেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের কিছু জেলায় নির্বাচনী সংঘর্ষ ও পরিস্থিতির উত্তেজনা নিয়ে নজরদারি চলছে। তিনি অঙ্গীকার করেন, সেনাবাহিনী অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে।
নির্বাচা সময়কালীন সরকার ও নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে, তিনি জানান, সেনাবাহিনী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের গাইডলাইন অনুযায়ী সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। তিনি জানিয়েছেন, তারা ৯০ হাজার থেকে এক লাখ সদস্য মাঠে মোতায়েন করবে, যারা দেশের সব জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত হয়, গ্রেপ্তার হওয়া সেনা কর্মকর্তাদের চাকরি সংক্রান্ত জটিলতা এখনও কাটেনি। গুম-খুনের মামলায় আটক ১৫ সেনা কর্মকর্তার চাকরি নিশ্চিত হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে সেনা সদর বলেছে, এটি সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে গিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, আইসিটি আইনের সঙ্গে সেনা আইনের অসামঞ্জস্য নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, আইসিটি অ্যাক্ট ও আর্মি অ্যাক্ট আলাদা আইন। বর্তমানে মামলা আইসিটি আইনে পরিচালিত হচ্ছে, এবং তারা সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখছেন। তিনি আরও জানান, যে সকল আটক সেনা কর্মকর্তা কারাগারে আছেন—তাদের চাকরি বা অবস্থান এখনো চূড়ান্ত নয়, এটি একজন আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়।
বিষয়টি আরও স্পষ্ট করার জন্য তিনি বললেন, সেনা কর্মকর্তাদের অবশ্যই আইনি অধিকার আছে, এবং যারা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জড়িত তাদের পরিবাররা সহানুভূতির পাত্র। সরকার যদি ‘আর্মি অ্যাক্ট’ অনুযায়ী বিচার করতে চায়, তখন সেনাবাহিনী প্রস্তুত। তারা এই দুটি আইনের মধ্যে কোন সংঘর্ষ হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের চাকরি বা চাকরি হারানোর বিষয়ে, তিনি বলেন, এটি আবারও আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়। ৬ অক্টোবর প্রকাশিত আইসি টি আইনের থার্ড অ্যামেন্ডমেন্ট অনুযায়ী, ডিসকোয়ালিফিকেশন বা টার্মিনেশনের ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা এখনো আসেনি। তবে, সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। সেনা কর্মকর্তারা এ বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর, ১১ অক্টোবর সেনা সদর জানিয়েছে, এ মামলার মধ্যে চাকরি ও এলপিআর এর জন্য থাকা ১৫ জনকে সেনাবাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের জন্য ঢাকা সেনানিবাসে অস্থায়ী ‘কারাগার’ প্রস্তুত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম, খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার এই ১৫ সেনা কর্মকর্তা ২২ অক্টোবর কারাগারে পাঠানো হয়।






