প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, সমাজের গভীর ইতিহাস ও সংস্কৃতির মূল শক্তিগুলি না বুঝে একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি হওয়া সম্ভব নয়। একইসঙ্গে, কোনও বিচারক তার সভ্যতার মূল ভিত্তি না জানলেই তিনি আইনের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেন না। শনিবার ঢাবির ইসলাম ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৭৫ বছর পূর্তি (হীরক জয়ন্তী) ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মিলনায়তনে।
প্রধান বিচারপতি তার প্রয়াত মা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশের প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক, অধ্যাপিকা ড. সুফিয়া আহমেদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি ছিলেন এমন এক প্রজন্মের প্রতিনিধি, যাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল নৈতিক সৌন্দর্য্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তার জীবন ছিল নারীর একাডেমিক ক্ষমতায়ন ও শিক্ষার নৈতিক শুদ্ধতার দৃষ্টান্ত, যা আজও আমার প্রেরণা।
তিনি বলেন, এই ঐতিহাসিক দিনটি আমাদের জন্য স্মৃতি ও সামঞ্জস্যের এক মহামিলনের সুযোগ। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৭৫ বছর পথচলা কেবল একাডেমিক সাফল্যের ইতিহাস নয়, বরং এটি দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের এক অঙ্গ।
প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন, ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের গভীর বোধ ছাড়া একজন ব্যক্তি বা সমাজ প্রজ্ঞাবান হতে পারে না। কোনও বিচারক তার সভ্যতার মূল ভিত্তি না জানলে আইনের সঠিক ব্যাখ্যাও দিতে পারবেন না। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, আইন হলো একটি দেশের নৈতিকত ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি, যা লেখা হয় ন্যায়ের ভাষায়। আর ইতিহাস আমাদের শেখায়, কেন সমাজকে আরও উন্নত ও মানবিকভাবে গড়ে তোলা জরুরি।
প্রেসিডেন্ট বলেন, বিচার বিভাগের সংস্কার প্রয়োজনীয়, কারণ কেবল ঐতিহ্যের বাইরে থেকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। এটি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। গত এক বছর একাধিক সংস্কারমূলক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বিচারব্যবস্থার স্বায়ত্তশাসন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানুষের সহজ বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার কাজ জোরদার করা।
তিনি বলেন, মূল লক্ষ্য হলো প্রশাসনিক নয়, বরং নৈতিক। যেখানে প্রতিষ্ঠান তার ক্ষমতাকে সেবা দেয়, কর্তৃত্ব হয় দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছ, আর বিচার বিভাগ জনগণের আস্থার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে নিজেকে সমাজের নৈতিক অভিভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
প্রধান বিচারপতি আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়ানোর কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিশর, ফিলিস্তিন ও থাইল্যান্ডের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা। এর মূল উদ্দেশ্য হলো— আইনের পাশাপাশি ইতিহাস ও দর্শনের জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে বিশ্বজনীন মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা।
তিনি উল্লেখ করেন, আজকের এই অনুষ্ঠান শুধুমাত্র একটি একাডেমিক উদযাপন নয়, বরং এটি বিভাগের নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রভাবের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ইতিহাস আমাদের মূল্যায়ন করে না, বরং আমাদের প্রচেষ্টার সততা ও নৈতিকতা মর্মে প্রতিফলিত হয়। এই বার্তা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভবিষ্যতের ভিত্তি।
প্রধান বিচারপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, এর ঐতিহ্য ও বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতি বিষয়ক অবদান তুলে ধরেন। তিনি সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান, এবং সভাপতিত্ব করেন বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষক, বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী ও অতিথিরা।






