বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা যদি আহ্বান জানান, তাহলে বিএনপি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন অন্য কোনও রাজনৈতিক দলকে দিয়ে তাদের আলোচনার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে বিএনপি সতর্ক, কারণ এই সরকার কোনও নির্বাচিত নয় এবং তাদের এত শক্তি প্রদর্শন গ্রহণযোগ্য নয়।
শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ছাত্রদলের আয়োজিত ‘অতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছর’ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। সরকারকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য তিনি সকল কার্যক্রম গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে, ‘আমরা আপনাদের সমর্থন করেছি এবং করবো সেই সীমার মধ্যে। যদি মনে করেন আরেকটি রাজনৈতিক দলকে দিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন, তাহলে কেন? যদি পদক্ষেপের জন্য সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আমন্ত্রণ জানায়, আমরা সব সময় আলোচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু অন্য কোনও দল কেন এই আহ্বান জানাচ্ছে?’
তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব থাকলেও, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়টি দলের জন্য উদ্বেগজনক। বিএনপি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে—চেষ্টা করে এনসিপি, জামায়াত বা অন্যান্য দলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে। তবে, কোনও রেফারির ভূমিকায় অন্য কোনো দলের মাধ্যমে আলোচনা করা ঠিক নয় বলে তিনি মনে করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময় নির্ধারণের এখতিয়ার নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন এবং সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘তারা যেন সব সময় মনে করে, তারা নির্বাচিত নয়। তাদের এই ক্ষমতা থাকা উচিত নয়। আমরা যদি সাত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে না পারি, তবে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেব। এত শক্তি প্রদর্শন তাদের মানায় না।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম যে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারি হিসেবে কাজ করবে এবং অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু এখন তারা রেফারির বদলে গোল দিচ্ছেন, এবং বলছেন, সিদ্ধান্ত নিতে হবে সাত দিনের মধ্যে।’ তিনি জামায়াতে ইসলামীকে নিশানা করে সতর্ক করে দেন, যারা ১৯৭১ সালে দেশ থেকে বিভাজনের দায়িত্বে ছিলেন এবং অতীতের সংগঠনগুলোর সাথে আলাদা রূপ নেওয়ার চেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ যদি তারা আবার ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করে, তবে ফলাফল কি হবে, আল্লাহই ভালো জানেন। এসব অগণতান্ত্রিক শক্তি শক্তিশালী হতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর। এসব জিনিস সরকার বা অন্যরা মানবে না।’
তিনি জানান, ‘আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকাই আমরা রাজপথে থাকবো এবং একে উত্তপ্ত হতে দিব না। সরকারের শেষ তারিখ দেয়ার সময় এসেছে, তবে কোন পক্ষ আলটিমেটাম দিচ্ছে? সরকার তো আপনারা সুপারিশ করেছেন। এই সব কিছুর সঙ্গে মিলিয়ে আমাদের কথা বলছেন।’
তিনি বলেন, দেশের মধ্যে গণভোটের প্রয়োজন নেই। এই ভোটের মাধ্যমে সংবিধান ও আইন পরিবর্তিত হবে। তবে এর নৈতিক বাধ্যবাধকতা সংসদ সদস্য ও ভবিষ্যত সংসদ কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হবে, যারা কাকে চায় এবং চায় না, তার উপর ভিত্তি করে। তিনি স্পষ্ট করেন, নির্বাচনের বাইরে গণভোটের কোন বিকল্প নেই।
১৩ নভেম্বর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ঘোষিত লকডাউন কর্মসূচির প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সেদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হবে। সেই দিন পুরো দেশে লকডাউন চলছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। মানুষ বলে, ইহারা পাগল। এক বছর ধরে কীভাবে এ ফ্যাসিস্ট শাসকদল ক্ষমতায় থাকছে এবং তারা জনগণকে অমান্য করে এই রকম কার্যক্রমে নেমেছে, সেটি কোনোভাবেই মানা যায় না। যদি সাহস থাকে, তবে আসুন। দেখা যাবে, জনগণ আপনাদের কেমনভাবে গ্রহণ করে। আমরা চাই, আপনারা আসুন, বিচার মুখোমুখি হন।’
অনুষ্ঠানে অন্য বক্তাদের মধ্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় উপস্থিত ছিলেন।






