বাংলাদেশে ক্রিকেটের ২৫ বছর পূর্তিতে আমাদের দেখে মনে হয়, আমাদের পথচলা এখনো অনেক দূরে। শুরুতে আমাদের স্বপ্ন ছিল টেস্ট ক্রিকেটে সেরা চার দলের মধ্যে স্থান করে নেওয়া, কিন্তু সেই স্বপ্ন এখনো পুর্ণতা লাভ করেনি। আমরা এখনো অন্য টেস্ট দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোতে পারিনি। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার প্রথম সময়গুলোয় আমাদের কোন নিজস্ব মাঠ ছিল না, অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধাও খুব সীমিত ছিল। আজকের দিনে আমাদের অনেক ক্রিকেট মাঠ এবং খেলোয়াড়রা নিয়মিত অনুশীলন ও উন্নত সুবিধা পাচ্ছে, তবে তা কি যথাযথ পর্যায়ে পৌঁছেছে? অপর্যাপ্ত পর্যায়ে গেলে কতদূর এগোনো সম্ভব? পূর্ববর্তী সময়ে কম সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সাকিব আল হাসানসহ অনেক খেলোয়াড় emerged হয়েছেন, যা প্রমাণ করে সম্ভাবনা এখনও রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো- ওরা অল্পতেই সন্তুষ্ট হয়ে যায় এবং অল্পতেই হৃদয় ভেঙে যায়, ব্যক্তিগত অর্জন সত্ত্বেও। সাকিব, তামিম, মাশরাফি, আশরাফুল, মুশফিক, মুমিনুল—এই তারকারা সবাই দেশের ক্রিকেটের গর্ব, কিন্তু দলগত সাফল্য এখনো এসেছে কাছাকাছি পর্যায়ে। এর জন্য আমাদের প্রয়োজন উন্নত কাঠামো, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, নিয়মিত লিগ আয়োজন এবং ভালো মানের ঘরোয়া ক্রিকেটের উন্নয়ন। দুঃখজনকভাবে, এগুলোর অভাবে আমাদের স্বপ্নের দিকে অগ্রসর হওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে অনেকেই হয়তো বলবেন, সুযোগ-সুবিধার অভাবে তারা ভালো খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারেনি। তবে, ১০-১৫ বছর আগে কম সুযোগ-সুবিধায়ও সাকিবরা তৈরি হয়েছে। অতীতে আমাদের সংস্কৃতি ছিল খেলোয়াড় তৈরি করার, কিন্তু বর্তমানে ভুল পরিকল্পনা, সংকটময় মানুষ ও দুর্বল সিস্টেমের কারণে আমরা পিছিয়ে গিয়েছি। অবকাঠামো উন্নয়ন ও খেলাধুলার মান বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এখনো সম্পন্ন হয়নি। খেলোয়াড়দের দায়ও আছে, তবে মূল সমস্যা বাংলাদেশে ক্রিকেটের সংস্কৃতির অভাবে এখানে কেউ বিরাট কোহলি হয়ে উঠতে পারবে না। বাংলাদেশে মিরপুরের মতো বড় আঙিনা থাকলেও উপযুক্ত অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে দেশীয় ক্রিকেটের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত। ভারতের রায়পুরের মতো স্থানেও আইপিএলের মতো আসর না থাকলেও তাদের সুযোগ-সুবিধার মান অনেক উন্নত। এখানেই বোঝা যায়, আমাদের পরিকল্পনা, অভিজ্ঞতা ও সঠিক নেতৃত্বের অভাবে ক্রিকেটের অগ্রগতি হয়নি। আমাদের দীর্ঘস্থায়ী অভ্যাস ছিল টেস্ট ক্রিকেটে বড় কিছু করার, কিন্তু ধারাবাহিকতা ও মানসিক প্রস্তুতির অভাবে সেটা এখনও সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাস বলছে, আমাদের বহু প্রজন্ম এই খেলায় অবদান রেখেছে। অমিনুল ইসলাম প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন, আশরাফুল দ্রুত নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন, আবার মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকের মতো তারকারাও এসেছেন। কিন্তু পরবর্তী জেনারেশন আগেরদের তুলনায় এগিয়ে গিয়েছেন কি? যদি কেউ চায় চীনে গিয়ে ব্রায়ান লারার মতো হতে, সেটা কি সম্ভব? সেখানে সংস্কৃতি ও পরিবেশ আমাদের মতো নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি এমন যে, চাইলেও কেউ বিরাট কোহলি হয়ে উঠতে পারবে না। আমাদের অনেক কিছু উন্নত করা দরকার। খালেদ মাসুদ, সাবেক অধিনায়ক বলেন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের মতো দেশের অবস্থান এখন অনেক বেশি উন্নত, কিন্তু বাংলাদেশে সেই সুযোগ-সুবিধা ও সংস্কৃতি এখনও জন্মায়নি। ভুল পরিকল্পনা, ভুল মানুষ ও দুর্বল সিস্টেমের কারণে আমরা পিছিয়ে গেছি। অবকাঠামো ও মানসম্পন্ন উচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটের অভাব লক্ষ্যণীয়। আমাদের মাঠ ও সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন এখনো অপ্রতুল। টেস্ট দলের ধারাবাহিকতা ও মানোন্নয়নে সমস্যা রয়েছে। ব্যাটসম্যানরা বড় রান করতে গিয়ে প্র্যাকটিসের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারছেন না, কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটে মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি অর্জনের সুযোগ কম। আধুনিক ক্রিকেটে সাদা বলে খেলা সহজ, টাকা বেশি। কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে হলে মানসিক প্রস্তুতি ও পরিশ্রম দরকার। কোচদের দায়িত্ব খেলোয়াড়দের বুঝিয়ে দেওয়া, লাল বলের ক্রিকেটে ফিরে আসা ও সংযমে খেলোয়াড়দের গড়ে তোলা। বড় ইনিংসের জন্য কঠোর পরিশ্রম ও মানসিক দৃঢ়তার প্রয়োজন। শেষদিকে, আমি শুধু এটুকু চাচ্ছি, আধুনিক ক্রিকেটে সাদা বলের মূল্য বেশি বললেও, কোচদের দায়িত্ব খেলোয়াড়ের মনোভাব ও মানসিকতা গড়ে তুলতে। শুধু সুযোগ-সুবিধার ওপর ভিত্তি করে বড় হওয়া যায় না, এতে অবশ্যই মানসিকতা, অধ্যবসায় ও দায়িত্ববোধ ঢুকাতে হবে।






