বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এক সময় কিছু রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদের নিষ্ঠুরতা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে গিয়ে স্বৈরাচারসমেত ফ্যাসিবাদের আশ্রয় নিয়েছিল। বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্ধকারে থাকা সেই দলের ছত্রছায়ায় পরাজিত, পলাতক ও স্বৈরাচারী শক্তিগুলো যেন পুনরায় রাষ্ট্রীয় রাজনীতিতে পরিবহনের চেষ্টা করছে, এটি খুবই উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, গণভোটের আড়ালে পতিত, পরাজিত ও পলাতক অপশক্তির পুনর্বাসনের যে চেষ্টার অভিযোগ উঠছে, সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি।
বুধবার রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ৭ নভেম্বরআর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের স্মরণে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই কথা বলেন। সভার সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তারেক রহমান আরও বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল বর্তমানে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় শর্তাসহ জাতীয় নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে জটিলতা সৃষ্টি মানে একদিকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নেওয়া এবং অন্যদিকে পলাতক স্বৈরাচারী শক্তিগুলোর পুনরাগমনকে সুগম করা। তিনি আরও আক্ষেপ প্রকাশ করেন, রাজধানীতে অগ্নিসন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তাচার দেখেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বলতাকে সুবিধা হিসেবে নিয়ে কিছু রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। তিনি সকল দল ও নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন, ভবিষ্যতে জনগণের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে।
তারেক রহমান বলেন, ‘জুলাই সনদে যা অঙ্গীকার করা হয়েছে, বিএনপি সেই অঙ্গীকার রক্ষা করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবে কেউ যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দুর্বল ভাবা কিংবা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়, তবে তা তাদের রাজনৈতিক পরাজয়ের কারণ হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের তিনি সতর্ক করে বলেন, পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করবেন না।’
অর্থনৈতিক অঙ্গনে তিনি উল্লেখ করেন, এ বছর আলু চাষিরা বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। প্রত্যেকের জন্য ২৫-২৭ টাকার খরচ হলেও তারা অর্ধেক দামে আলু বিক্রি করতে পারছেন না, ফলে তাদের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে। অর্থাৎ, এই অর্থের চেয়ে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে এখনই অনেক বেশি জরুরি।
আলোচনায় তিনি আরও বলেন, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশে। অথচ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন আলোচনায় সড়ক নিরাপত্তা ইস্যুটি গুরুত্ব পায়নি।
লাইবেরেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া রহমান সংস্কার শুরু করেছিলেন, কিন্তু তিনি তা সম্পূর্ণ করতে পারেননি। তিনি তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার বাবামা যেখানে শেষ করেছেন, আপনি সেখান থেকে শুরু করে সামনে এগিয়ে যান। এ জন্য তিনি সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের একটি বড় সংকট সৃষ্টি হয়েছে, যা না-প্রয়োজনীয় এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি আরও বলেন, এই সংকট তৈরি করা হয়েছে—এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি সকল নেতাকে অনুরোধ জানাতে বলেন, এই সংকটের মধ্যে থাকতে কোনও স্থান নেই; বরং একসাথে মিলিত হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, এই সংকটের মূল কারণ হলো, অংশবিশেষ রাজনৈতিক দল ও দলের কিছু ব্যক্তির অপতারীতির কারণে অপ্রয়োজনীয় অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন বিএনপি প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং সাত্তার পাটোয়ারী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, এবি পার্টি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ-অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান এবং লেবার পার্টি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।






