ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কেন্দ্র করে এবার প্রার্থী মনোনয়নে একটি অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এই নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় দলটি নবীন ও প্রবীণ নেতাদের সমন্বয় করেছে, যেখানে তাদের অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা এবং আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়েছে। এর ফলে দলের বর্তমান নেতৃত্ব সাধারণ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে এবং এ নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীরাও উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনা ও স্বচ্ছ, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিচালিত এই প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের সংস্কারের বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া এখন কয়েকটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, সামাজিক অবস্থান, নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা, আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। বিভাগীয় সংগঠনের দায়িত্বশীলরা প্রত্যেক প্রার্থীর বিস্তারিত প্রতিবেদনে করে এই তথ্যগুলো প্রস্তুত করেছেন, যা জাতীয় স্থায়ী কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হয়। দলের পক্ষ থেকে পাঁচটি পৃথক জরিপ চালানো হয়েছে, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা হয়।
নির্বাচনী বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই প্রক্রিয়া প্রার্থী নির্বাচনকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, বিজ্ঞানসম্মত ও দলীয় স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। তারেক রহমানের সরাসরি বৈঠকে প্রার্থীর ব্যক্তিগত যোগ্যতা, এলাকায় জনমতের ধারণা, দলের প্রতি আত্মত্যাগ ও নেতৃত্বের দক্ষতা মূল্যায়ন করা হয়। এই ধারায় অতীতের মতোো কোনো প্রকার তদবির বা পারিবারিক প্রভাবের সুযোগ দেয়া হয়নি, যা দলটির অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতার প্রমাণ।
প্রার্থী তালিকা ঘোষণায় এখনো ৬৩টি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে, যা কৌশলগত কারণের জন্য। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় পরিস্থিতি, মিত্র দলের সাথে সমঝোতা ও নির্বাচনী কৌশলের ভিত্তিতে এসব আসনের প্রার্থী ঠিক হবে। ঢাকা শহরের ১৫ আসনের মধ্যে নয়টি তালিকা ইতোমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে, বাকি ছয়টি আসনের মধ্যে ঢাকা-১৩ ও ঢাকা-১৭ অবশিষ্ট রয়েছে। এ আসনগুলোতে বিভিন্ন দল যেমন এনডিএম, জাতীয় পার্টি, এলডিপি, গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য ও গণঅধিকার পরিষদ প্রার্থী স্থান নিতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়াও, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অন্তত ২০টি আসনে বিএনপির সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করতে ইচ্ছুক। তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে দলটি চাইছে, ক্ষমতায় এলে তাদের অন্তত তিনজন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হোক। ইতোমধ্যে কিছু আসনে প্রাথমিক সমঝোতার ভিত্তিতে প্রার্থী প্রত্যাহারও হতে পারে বলে সূত্র জানায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে, বিএনপি কিছু আসনে সম্ভাব্য আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করছে, যেখানে এনসিপি কিছু আসনে প্রার্থী হবার জন্য আগ্রহী।
প্রার্থী নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে ঢাকার কিছু আসনে ইতোমধ্যে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা প্রচারমূলক কার্যক্রম শুরু করেছেন। এই সব প্রক্রিয়া দলীয় নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা, দলীয় ঐক্য ও ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিকল্পনা স্পষ্ট করছে। সার্বিকভাবে, এই প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া নতুন উদাহরণ স্থাপন করে, যেখানে যোগ্যতা ও আন্দোলন-সংগ্রামের মূল্যায়ন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এটি দলীয় স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতার জন্য উল্লেখযোগ্য একটি ধাপ, যা ভবিষ্যত নির্বাচনে বিএনপির শক্তিশালী অবস্থান নির্দেশ করে।






