চট্টগ্রামের লালদিয়ায় দেশের প্রথম সবুজ ও স্মার্ট কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এই নতুন টার্মিনালটি বিশ্বমানের প্রযুক্তি ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ হবে, যার ধারণক্ষমতা হবে ৮ লাখ কনটেইনার। এটি নির্মাণের জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করবেন ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস কোম্পানি, যারা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই ঘোষণা দেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকীকরণে এ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
চুক্তি অনুযায়ী, এপিএম টার্মিনালস বিভি লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালের ডিজাইন, অর্থায়ন, নির্মাণ ও পরিচালনা করবেন, তবে মালিকানা মূলত থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। এতে সরকারের ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দীর্ঘকাল ধরে কাজ করে আসা এপিএম টার্মিনালস, যা বর্তমানে ৩৩টির বেশি দেশ ও ৬০টির বেশি টার্মিনাল পরিচালনা করছে, তাদের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের বন্দরের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে লালদিয়া বন্দর বিশ্বের আধুনিক, সবুজ ও স্মার্ট বন্দরে পরিণত হবে। এটি ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম চালাবে, পাশাপাশি জাহাজের ধারণক্ষমতা দ্বিগুণ হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর নতুন এবং উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে শিপিং সংযোগ বাড়াতে সক্ষম হবে, ফলে রপ্তানি-আমদানি খরচও কমে আসবে। আশিক চৌধুরী বলেন, এই প্রকল্পে এপিএম টার্মিনালস পুরো মেয়াদকালের মধ্যে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা তার বেশি বিনিয়োগ করবে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি সর্ববৃহৎ ইউরোপীয় ইক্যুইটি বিনিয়োগ। এলসিটি চালু হলে পারকন্টেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা ৮ লাখ টিইইউ-তে উন্নীত হবে, যা বর্তমানে সক্ষমতার প্রায় ৪৪ শতাংশ বেশি। প্রকল্পটি ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত।
প্রকল্পটি রাজস্ব ভাগাভাগি ভিত্তিতে পরিচালিত হবে, যা সরকারের রাজস্ব আয়ে অবদান রাখবে। নির্মাণ ও পরিচালনায় সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ৫০০ থেকে ৭০০ মানুষের মতো, পাশাপাশি ট্রাকিং, স্টোরেজ, লজিস্টিকস ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য হাজারো পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে। এপিএম টার্মিনালস উচ্চমানের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং পরিবেশ মানদণ্ড অনুসরণ করবে। এতে ডিজিটাল টার্মিনাল পরিচালনা পদ্ধতি, লিন প্ল্যানিং ও ফ্লো প্রসেস ব্যবস্থার ব্যবহার হবে, যা স্থানীয় প্রযুক্তিবিদ ও প্রকৌশলীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুত জাহাজের টার্নআরাউন্ড সময় বৃদ্ধি পাবে ও রপ্তানিকারকদের জন্য কনটেইনারের ডিউ ডেলি সময় কমে আসবে, বিশেষ করে পোশাক, কৃষি এবং হালকা শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা সময়মতো ট্রান্সপোর্ট ও সরবরাহ করতে সক্ষম হবেন। দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক প্রবাহের উন্নতি হবে, নতুন ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো, কোল্ড চেইন ও শিল্পাঞ্চলের প্রসার ঘটবে। জলবায়ু উপযোগী প্রযুক্তি ও জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমবে, যা বাংলাদেশের প্যারিস চুক্তির অঙ্গীকার পূরণে সহায়ক হবে।
চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী উল্লেখ করেন, এই কনটেইনার টার্মিনাল দেশের বন্দর শিল্পকে বিশ্বমানের দ Liveতে উন্নীত করবে। এটি কেবল অবকাঠামোর উন্নয়ন নয়, দেশের লজিস্টিক খাতকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করবে, যার ফলে রপ্তানি, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।






