এবার পবিত্র রমজান এবং জাতীয় নির্বাচন প্রায় একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যা_nিত্যপণ্যের দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং ব্যবসায়ী নেতারা আগেভাগে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি ও বাজারের সার্বিক পর্যবেক্ষণ জোরদারের জন্য গুরুত্বারোপ করেছেন।
মঙ্গলবার মতিঝিলের দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ‘নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এই আহ্বান জানানো হয়।
এফবিসিসিআই এর প্রশাসক আব্দুর রহিম বলেন, বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল থাকলেও রমজানে খাদ্যপণ্যের চাহিদা নাটকীয়ভাবে বাড়বে। এজন্য রোজার জন্য ব্যবহৃত পণ্য আমদানির জন্য বৈধতার জন্য এলসির মার্জিন কমানো হয়েছে। তবে, এখন থেকেই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, সরবরাহকারী, আমদানিকারক এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি সতর্ক করে বলেছেন, চাঁদাবাজি ও পরিবহন ব্যবস্থায় যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে। রমজানকে কেন্দ্র করে পণ্যের দাম বৃদ্ধির নামে যেন চাঁদাবাজির সুযোগ না নেওয়া হয়, এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সতর্ক থাকতে হবে।
বাজারে কোনো পক্ষের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ না হয় এবং খাদ্যে ভেজাল না মেশে, সেজন্য ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে সজাগ থাকতে তিনি আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, পণ্যের দাম নির্ধারণে শুধু কথায় নয়, व्यवहारেও স্বচ্ছতা আনতে হবে।
পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দাম নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। বর্তমানে ‘আন্ডাররেট’ হয়ে বাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, তেলের দাম যখন বাড়ে, তখন কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়—তেল মিলগুলোতে মজুত থাকে না এবং বিশেষ লটারির মাধ্যমে তেল কিছু বিশেষ ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হয়, যারা পরে বেশি দামে তা বিক্রি করে থাকেন। এই অসঙ্গতি দূর করতে নজরদারিতে আরও জোরদার প্রয়োজন।
টিকে গ্রুপের পরিচালক আতাহার তাসলিম জানান, দেশে বছরে প্রায় ২২-২৩ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি করা প্রয়োজন, যার বেশির ভাগের সরবরাহ হয় তিনটি বড় কোম্পানির মাধ্যমে। রমজানে চাহিদা মেটাতে সরকারকে এই আমদানি আরও জোরদার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শীতকালে গ্যাসের সরবরাহ কমে গেলে উৎপাদন ব্যাহত হয়, যার প্রভাব সরবরাহে পড়ে। এ জন্য মিলগুলোতে গ্যাসের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
মেইজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিজানুল হক বলেন, পোর্টে শুল্কের বেড়ে যাওয়ায় পণ্য আমদানির খরচ বেড়ে গেছে, যার ফলে বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এছাড়া, লাইটার জাহাজের অপ্রতুলতা সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে, এ বিষয়ে পর্যাপ্ত নজরদারি প্রয়োজন।
শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন অভিযোগ করেন, কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা সবকিছু শোষণের জন্য দাম বাড়াচ্ছে। কিছু ব্যবসায়ী মোড়কে তিন টাকার পণ্য দিয়ে চার টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছেন, যা সরকারের বিডম্বনাও করতে পারেনি। একইসঙ্গে ফড়িয়া ও দালালচক্রের কার্যক্রম বন্ধের কথাও বলেন। তিনি প্রকাশ করেন, পুলিশও অনেক সময় চাঁদাবাজিদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সক্রিয় নয়, ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
বাজার বিশ্লেষক কাজী আবদুল হান্নান সতর্ক করে বলেন, নির্বাচন ও রমজানের সময় বাজারে অতিরিক্ত টাকা প্রবাহের কারণে চাহিদা থাকে বেশি, যা বাজার অস্থির করার জন্য দায়ী। তিনি এও বলেন, পেঁয়াজের পাঁচ দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি অস্বাভাবিক, যা ব্যবসায়ীদের ভয়ে মূলত বাজারে নিয়ন্ত্রণের আনকোরা পরীক্ষা বলে মনে হচ্ছে। বাজার পর্যবেক্ষণে আরও মনোযোগ দিতে হবে।






