দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সরকারের নীতিনির্ধারকরা বুধবার এক জরুরি সভায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তারা মোট ৮০ হাজার মেট্রিক টন সার, ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল, ৫০ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি আমদানির অনুমোদন দিয়েছেন। এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাজারের পুষ্টি ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই সভা সম্পন্ন হয়, যেখানে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে ব্রিফিংকালে তিনি জানান, আসন্ন রমজান মাসের জন্য ভোক্তাদের দাবির কথা বিবেচনায় নিয়ে চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসাথে সয়াবিন তেলের ওপরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যদিও বর্তমানে দেশের বাজারে তেলের ঘাটতি নেই এবং পরিস্থিতি স্থিতিশীল।
এছাড়াও, বৈঠকে কৃষি, বাণিজ্য, শিল্প, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নয়টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়, যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সার, খাদ্যশস্য ও ভোজ্যতেলসহ অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প।
বিশেষ করে, কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মরক্কোর ওসিপি নিউট্রিক্রপসের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এর মোট মূল্য প্রায় ৩৪৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং প্রতি টনের দাম থাকছে প্রায় ৭০৯.৩৩ মার্কিন ডলার।
অপরদিকে, সৌদি আরবের এসএবিআইসি এগ্রি-নিউট্রিয়েন্ট কোম্পানি থেকে আরও ৪০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার সরবরাহের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যা মোট মূল্য প্রায় ১৯৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। প্রতি টনের দাম নির্ধারিত হয়েছে ৩৯৯.১৬ মার্কিন ডলার।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে, ইস্তাম্বুলের বেগালতা ড্যানিসমানলিক হিজমেটলেরি এ.এস. থেকে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পরিশোধিত চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এর মূল্য প্রত্যেক কেজির জন্য ৯৪ টাক ৯৪ পয়সা, যেখানে মোট খরচ হবে প্রায় ৭৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। দ্বুবাইয়ের ক্রেডেন্টোন এফজেডসিও থেকে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেলও এই তালিকায় রয়েছে, যার মোট মূল্য হবে ১৫৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, প্রতি লিটার ১৬৪ টাকা ২১ পয়সায়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অপর একটি প্রকল্পের আওতায় সিঙ্গাপুরের মেসার্স অ্যাগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনাল থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চালের আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি অনুমোদিত হয়েছে। এর মূল্য দাঁড়িয়েছে ২১৭ কোটি ৯ লাখ টাকার কাছাকাছি, যেখানে প্রতি টনের দাম রয়েছে ৩৫৫.৫৯ মার্কিন ডলার।
প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মাধ্যমে হাওর অঞ্চলে সড়ক নির্মাণের কার্যক্রমও অগ্রসর হচ্ছে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলায় পৃথক দুটি বড় প্রকল্পের জন্য যথাক্রমে ১৮০ কোটি ৬৪ লাখ ও ১৯০ কোটি ৯০ লাখ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সড়ক উন্নয়নে ব্যয় ধিককভাবে বাড়ানো হয়েছে, চট্টগ্রামের চাতুরী থেকে কর্ণফুলী ড্রাই ডক পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নের জন্য ৭৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা অবদান রাখা হয়েছে। এরই পাশাপাশি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য বে টার্মিনাল প্রকল্পে পরামর্শক সেবা ক্রয়ের জন্য মূল আসন বেড়ে ৩২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে, এই প্রকল্পগুলো দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।






