ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে রাশিয়ার পরিচালিত বড় ধরনের হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে তিন শিশু সহ মোট ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৯৩ জন। ফেব্রুয়ারির ২০২২ সালে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরুির পর এটি এ অঞ্চলটিতে রাশিয়ার অন্যতম প্রাণঘাতি হামला বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয় সময় গত বুধবার ভোরে রুশ বাহিনী এই হামলা চালিয়েছে, যা খবর দেওয়া হয়েছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, লভিভ ও ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্কের মতো ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলেও রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভের তিনটি জেলায় ড্রোন হামলায় আরও ৩০ জন আহত হয়েছেন।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এক্স-১০১ একটি আবাসিক ভবনে আঘাত হেনেছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই হামলার দৃঢ় নিন্দা জানিয়েছেন এবং বলেছেন, টার্পোনিল শহরে হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে এবং অনেক হতাহত ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়ে আছেন। রাশিয়ার ওই হামলায় ৭৫০টির বেশি ড্রোন ও ৪৭টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
অতিরিক্তভাবে, দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানানো হয়েছে। এর আগে, খারকিভে রুশ হামলায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য কিছু প্রস্তাব এনেছে যা স্থানীয় যুদ্ধবিরতি বা শান্তি চুক্তির পথে মনে করা হচ্ছে। এই প্রস্তাবে ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড ও অস্ত্র ছেড়ে দিতে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সূত্রে এমনটাই জানা গেছে। এই প্রস্তাবের মূল খসড়ার জন্য কিয়েভকে সন্তুষ্ট করতে বলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী কমানোর অংশ হিসেবে এই প্রস্তাবে বেশ কিছু বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি টুরস্কে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান সঙ্গে বৈঠকের পর টেলিগ্রামে বলেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এই যুদ্ধের সমাধানে আশাবাদী। একই সঙ্গে ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও শক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিন বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প প্রশাসন নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, এবং এই কারণে ইউক্রেনের অর্থনীতি কিছুটা সহানুভূতিতে ফিরে এসেছে।
অপরদিকে, রাশিয়া এখনও নিজের শর্তে রয়েছেন, যেখানে তারা ইউক্রেন থেকে বিভিন্ন প্রদেশে সেনা প্রত্যাহার ও ন্যাটোতে যোগদানের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করছে। ইউক্রেন যেমন এসব দাবি মানতে অস্বীকার করেছে, তেমনি রাশিয়াও অভিযোগ করছে তাদের ভূখণ্ডের প্রায় ১৯ শতাংশ এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শীতের আগমন মরশুমে তারা ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনার ওপর হামলা চালানোর মাধ্যমে চাপ বাড়াচ্ছে। তুরস্কের সহায়তায় আঙ্কারায় রাশিয়ার প্রতিনিধিরা আলোচনা চালাচ্ছে, তবে ক্রেমলিন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক কোনও ফলাফল আনার জন্য আলোচনা করছে।
মার্কিন পরিকল্পনা অনুযায়ী, কিয়েভকে পূর্ব ইউক্রেনের কিছু এলাকাও অর্পণ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে, এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতের রুশ আক্রমণ থেকে ইউরোপ ও ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে। ইউরোপীয় কূটনীতিকরা মনে করেন, এই ধরনের প্রস্তাব রুশ চাপের অংশ এবং এর মাধ্যমে একটি টেকসই সমাধান বের হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
অতিরিক্ত, মার্কিন সেনাবাহিনী বর্তমানে কিয়েভে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে, যেখানে তারা জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই পরিস্থিতিতে, শান্তির আলোচনায় অগ্রগতি ও সম্ভাবনার ওপর বিশ্বতত্ত্বাবধান অব্যাহত রয়েছে।






