রংপুরের কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের আলোচিত শিক্ষক আলিউল করিম প্রামানিকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানজুড়ে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি প্রগ্রতিতে পৌঁছেছে যেখানে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পদে থাকা ৫৩ জন শিক্ষক একযোগে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন, যা রংপুরের শিক্ষাঙ্গনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও নজিরবিহীন ঘটনা।
অভিযোগে বলা হয়েছে, আলিউল করিম বহু অভিযোগের বিষয়, তার মধ্যে রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার, নারী শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, বোরকা পরা একজন শিক্ষিকাকে সালীনতা বিরোধী মন্তব্য, কর্মী-বিরোধী বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা, সহকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ, প্রশাসনিক কাজে বাধা এবং ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে অর্থ আত্মসাতের মতো গুরুতর দুর্নীতি।
তাদের আরও অভিযোগ, তিনি হাইকোর্টের রায় প্রত্যাখ্যান করে পরাজিত এক বরখাস্ত শিক্ষকদের অবৈধভাবে পুনর্বহাল করেছেন এবং নিজের ছেলে সেনাবাহিনীর উচ্চপদে থাকাকালীন সহকর্মীদের উপর ভয়ভীতি দেখানোর কাজে জড়িত বলে দাবি করেছেন শিক্ষকরা। অভিযোগ উঠেছে, তিনি বিভিন্ন অপরাধের জন্য শাস্তি পায়নি বরং উল্টো অতিরিক্ত ছুটিতে গিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এদিকে, তিনি বেশ কিছুবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
অভিযোগের মধ্যে রয়েছে যে, বরখাস্ত শিক্ষক আলতাপ হোসেনকে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আবার কলেজে ফিরিয়ে আনেন, যিনি শিক্ষাগত ঘাটতি ও জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত। এমনকি তিনি ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বকেয়া দেখিয়ে অর্থ ভাগবাটোয়ারার ঘটনাতেও জড়িয়ে পড়েন।
এছাড়াও, আটজনের বদলে নাসিরুল হক মিলনকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কারণে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। মিলন দাবি করেন, তিনি সিনিয়রদের সম্মতি নিয়েই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
এখন প্রতিষ্ঠানে চলছে দীর্ঘ দুই বছর ধরে চলমান অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রাজনীতি। এই পরিস্থিতি শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে, ভয় ও চাপের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে, এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এখন ১০০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ সালে আলিউল করিমের সাময়িক বরখাস্ত এবং ২০১০ সালে কঠোর শর্তে তার নতুন করে বরখাস্ত প্রত্যাহার, এরপর গত বছর তার ওপর চাপ সৃষ্টি করে অধ্যক্ষের পদত্যাগ আদায়, এবং নিজেই অধ্যক্ষের ক্ষমতা দখল ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণের ঘটনাগুলোও তাৎপর্যপূর্ণ।
শিক্ষকদের পাঁচ দফা দাবি হলো: ১। আলিউল করিমকে সব ধরনের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক দায়িত্ব থেকে দ্রুত অপসারণ; ২। তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত; ৩। অভিযোগ সত্য হলে কঠোর শাস্তি; ৪। প্রতিষ্ঠানটিতে সাধারণ ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আনা; এবং ৫। ভবিষ্যতে এমন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কেউ যেন দায়িত্বে আসতে না পারে।
স্থানীয় সুধীসমাজের মতে, অতীতের জেলা প্রশাসক ও কিছু কর্মকর্তার আশ্রয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার শিকার হয়েছে। তারা দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটিকে পুনরায় দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসনভিত্তিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।






