কঠোরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অনিয়মিত অভিবাসন রুখতে ব্রিটেনের সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আশ্রয়প্রার্থীদের দেওয়া স্থায়ী সুরক্ষার মেয়াদ কমিয়ে ৫ বছর থেকে ৩০ মাসে নামিয়ে আনা এবং সামাজিক সহায়তা সীমিত করার পরিকল্পনা। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে অনিরাপদ ও অনিয়মিত পথের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হবে। তবে অনেক বিশ্লেষক প্রশ্ন তুলছেন, এই উদ্যোগগুলো কতটুকু কার্যকর হবে, উঠতে পারে নানা বিতর্কও।
গত শনিবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নতুন পরিকল্পনার দিক নির্দেশনা তুলে ধরে, এরপর সোমবার পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে সেটি উপস্থাপন করা হয়।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, আশ্রয়প্রার্থীদের ‘অস্থায়ী’ সুরক্ষা দেওয়া হবে, যা এখনো পাঁচ বছর পর্যন্ত থাকছে। তবে এখন তা কমিয়ে ৩০ মাসে আনা হয়েছে। এর ফলে, দুই বছর ছয় মাস পর পর তাদের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে এবং কয়েকটি শর্ত পুরোপুরি পূরণ হলে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। আশা করা যাচ্ছে, এই পরিবর্তন ডেনমার্কের মডেল অনুসরণ করে আনা হয়েছে, যেখানে এই ধরনের নিয়ম চালু রয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এক দেশে কার্যকর নিয়ম অন্য দেশে একই ফল দেবে, এর নিশ্চয়তা নেই।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইগ্রেশন বিশেষজ্ঞ মিহনিয়া কুইবাস বলেন, “আমরা এখনই বলতে পারছি না এই উদ্যোগগুলো কতটা কার্যকরি হবে। বাস্তবায়ন দেখে বোঝা যাবে।”
সরকারের অন্য এক পরিকল্পনা হলো, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আবাসন ও সাধারণ ভাতা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে দিতে। যারা কাজ করার সক্ষম কিন্তু কাজ না করছে, তাদের সামাজিক সুবিধাও বন্ধ করার চিন্তা চলছে। পাশাপাশি, ব্যক্তিগত সম্পদ থাকলে তার ভিত্তিতে খরচ চালানোর দাবি উঠছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যালেক্স নরিস বলেন, “যাদের সম্পদ থাকে, তাদের নিজের ব্যয়ভার নেওয়া স্বাভাবিক।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কঠোরতা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, যুক্তরাজ্য এখনো অনেকের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে থাকতে পারে, বিশেষ করে ডাবলিন রেগুলেশন থেকে বের হয়ে আসায় ইউরোপে প্রবেশের পথ এখন পুরোপুরি বন্ধ নয়। শরণার্থী সংস্থাগুলোর মতে, এই পরিকল্পনাগুলোর মাধ্যমে মানুষ পালাতে বাধ্য হবে, তবে পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম। সংস্থা রিফিউজি কাউন্সিল মন্তব্য করেছে, এই পরিকল্পনা অযৌক্তিক এবং অমানবিক, কারণ এর ফলে সরকার কয়েকশো মিলিয়ন পাউন্ড অতিরিক্ত খরচ করবে শতাধিক বছর পরপর পুনর্মূল্যায়ন চালু থাকলে।
অভিযোগ রয়েছে, ব্রিটিশ সরকার চাইছে একটি স্বাধীন সালিশি সংস্থা গঠন করে আপিলের প্রক্রিয়া কঠোর করে তুলতে যাতে আদালতের ওপর নির্ভরতা কমানো যায়। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিবর্তনগুলো আদালতের চাপে পড়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। কারণ, ইতোমধ্যে রুয়ান্ডা প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা বন্ধ হয়ে গেছে এবং ফ্রান্সের সঙ্গে ‘ওয়ান ইন ওয়ান আউট’ চুক্তির মতো নানা বিষয় আদালতে পৌঁছেছে।
শিশু সুরক্ষা বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। জাতিসংঘের কনভেনশনের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শিশুদের বিষয়ক সিদ্ধান্তে সর্বোচ্চ বিবেচনা দিতে হবে, যা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা হতে পারে। এছাড়া, অভিবাসনের জন্য ইউরোপীয় মানবাধিকার সংস্থা (ইসিএইচআর) যদি বহাল থাকেন, তবে এসব সংস্কার বাস্তবায়ন খুব কঠিন হয়ে উঠবে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেমি বাদেনক ও জিয়া ইউসুফের মতো নেতাদের মতে, ইসিএইচআর থাকলে অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধ করা খুবই কঠিন। ফলে, এ ধরনের কার্যক্রমের বাস্তবতা নিয়ে নানা বিতর্ক ও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।






