বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অন্যানদে মন্তব্য করেছেন, ‘জামায়াতের ভোট যদি কেউ দেয়, তাহলে বুঝতে হবে তারা জান্নাতের টিকিট কেটে ফেলেছে। কোথায় এই জান্নাতের ঠিকানা, বলতে পারলে আমি শুনতে আগ্রহী।’ শনিবার রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল স্পষ্ট করে বলেন, ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতিতে লাভের সুযোগ নেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। তিনি জানান, ‘আমি এই কথাগুলো বলছি কারণ এগুলোর দ্বারা সমাজে বিষপ্রতিফলন ঘটছে। এসব কথা এখন সবাই বলছে, আর এই বিষয়গুলো জনসম্মুখে আসা উচিত।’
আলোচনায় মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষার মাধ্যমে নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উন্নয়নে ভূমিকা শীর্ষক এক সভায় তিনি বলেন, ‘জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বলতে চাই, এই দলটি আগে রাজনৈতিক মাঠে সুযোগ হারিয়ে ছিল। জিয়াউর রহমান তাদের জন্য নতুন পথ খুলে দেন। শুরুতে তারা ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (আইডিএল) নামে সংগঠন করে, পরে বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে শেষ ১০ বছর ধরে তারা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে পরাজিত করার জন্য দৃশ্যমান কোনও কার্যক্রম দেখাতে পারেনি।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে তারা ছাত্রলীগের সেজে প্রতিপন্ন হয়েছিল বলে শুনেছি। তবে আমরা জানি না সাম্প্রতিক সময়ে কতটুকু সত্য। আমাদের, যারা সরাসরি গণতান্ত্রিক পথে লড়াই করে আসছি, তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলেছে। আমাদের ৬০ লাখের বেশি মানুষ মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত, হাজার হাজার নেতাকর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার, গুম, মামলা ও নিষ্ঠুরতা চলছে। তাঁরা সরাসরি এই দমনপীড়নের মুখে পড়েছেন।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়াকে ছয় বছর কারাগারে রেখেছে, তারেক রহমান দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিজ দেশে ফিরতে পারেননি। ফখরুল আশনা প্রকাশ করেন, এখন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে গণতান্ত্রিক ভোটের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে।
আলোচনায় আরও দেখা যায়, রাজনীতি পরিবর্তনের নামে পিআর (প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা) চালু করতে দলগুলি চাপ দিচ্ছে। বিএনপি নেতার বক্তব্য, ‘তারা বলছে, পিআর ছাড়া নির্বাচন হবে না। হুংকার ছুড়ে চলছে। এখন আবার সোচ্চার, দৌড়ঝাঁপ করে নির্বাচন পর্ব সম্পন্নের চেষ্টা চলছে। এ সব প্রকৃতপক্ষে ঠিক নয়; মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন হোক।’
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে মসজিদের খুতবায় কী পড়বে, তা লেখা ছিল কাগজে, এখন আর হয়তো হয় না। অথচ, এমনকি নির্বাচনের সময় কওমি মাদ্রসার নেতারা শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে তাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দেয়। এটা দুঃখজনক।’
সেই সঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটি ফ্যাসিস্ট শক্তি দলীয় লোক বসিয়ে দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন যেমন একটি মর্যাদাসম্পন্ন ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান, সেখানে দলের লোক বসানো হলে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যাবে না। কিছু আলেম শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে ‘কওমি’ শিরোনামে নানা পদবী দেয়, যা আদর্শের পরিপন্থী। এটা প্রমাণ করে, নিয়োগটা রাজনৈতিকভাবে পরিচালিত।’
অন্যদিকে, ঐকমত্য কমিশন যে পিআর পদ্ধতির কথা বলেছে, তা সাধারণ মানুষের বোঝার জন্য জটিল বলে ফখরুল মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ বোঝেন, একজন কেন্দ্রীয় ব্যক্তি দাঁড়িয়ে মার্কা দিয়ে ভোট দেয়। এটাই আমাদের ঐতিহ্য। এখন নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার জন্য আবার গণভোটের আয়োজন হচ্ছে, যেখানে থাকবে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ প্রশ্ন। তবে এই প্রশ্নগুলো মানুষ পুরোপুরি বুঝতে পারছে না এবং শেষ পর্যন্ত বুঝতে না পারার শঙ্কাও রয়ে গেছে।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ডের গভর্নর শায়খ শাহ্ মো. নেছারুল হক। আলোচনা পরিচালনা করেন মসজিদভিত্তিক উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকর্মীর নেতারা, মো. জবাইদুর রহমান ও মাহফুজুর রহমান।






