টিভির স্ক্রিনে একবার চোখ সেঁটে দেখছিলেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ। পার্থে টিভি আম্পায়ারের কক্ষে তিনি মনোযোগের সঙ্গে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন। এই দৃশ্য দেখে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা গর্বে অভিভূত হতে পারেন, কারণ অ্যাশেজে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে তিনি ছিলেন অন্যতম আলোচিত।
শরফুদ্দৌলা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশের গর্বের অংশ হয়ে আছেন। গত বছরের মার্চে তিনি আইসিসির অ্যাডভাইজরি প্যানেলে বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে প্রবেশ করেন। তার দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মাঠের ম্যাচ পরিচালনা করা। আরো তিনি এ বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে তার প্রথম এবং সবচেয়ে আলোচিত বিশ্বমঞ্চে অবদানের দিনের সূচনা হতে দেখা যায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ায় বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে।
সেবার মেলবোর্নে চতুর্থ টেস্টের টিভি আম্পায়ার হিসেবে প্রযুক্তির অতিরিক্ত সাহায্য ছাড়াই তিনি নিজের চোখে যা দেখেছেন, তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাইকে বিস্মিত করেছিলেন। তখন তার সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছিলেন একাধারে সাইমন টফেল, রিকি পন্টিং, রবি Shাস্ত্রী ও মাইকেল ভন। তিনিই হয়তো সেই কারণেই এবার অ্যাশেজের মতো বড় সিরিজে দায়িত্ব পেয়েছেন বলে মনে করেন বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীরা।
অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ তাদের প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করে বলে, ডিআরএস ব্যবহারে এবার সেরা পারফর্ম করা অ্যাসিস প্যানেল এ côngে নেতৃস্থানীয় আম্পায়ারেদের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় শীর্ষে থাকা অ্যালেক্স হোয়ার্ফ, রড টাকার, পল রেইফেল, রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ ও রিচার্ড কেটেলবরো কেন অ্যাশেজে অংশ নিচ্ছেন না, তার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় আইসিসির নিয়মের ব্যাপারে, যেখানে সিরিজের সময় দুই দেশের নিরপেক্ষ আম্পায়ার নিয়োগ করা হয়।
তালিকায় থাকা অন্যান্য দেশের আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা, আল্লাহুদাইন পালেকার বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ব্যস্ত থাকলেও, বাংলাদেশ থেকে শরফুদ্দৌলা ছাড়া কোনো আম্পায়ার এই সিরিজে নেই। এই বছরের টেস্টে তার বিপক্ষে ২৯টি রিভিউয়েতে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হয়েছে ১০ বার।
ব্রিসবেনে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে তার ভূমিকা পাল্টে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দেখা যাবে তাকে। তবে পার্থে প্রথম থেকে শুরু করে সিরিজের বাকি তিন টেস্টে তিনি আর টিভি আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করবেন না; সেখানে মাঠে দায়িত্বে থাকবেন নিতিন মেনন ও আদ্রিয়ান হোল্ডস্টক।
বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা নিশ্চয়ই গর্ববোধ করতে পারেন। কারণ অ্যাশেজের মতো কুলীন সিরিজে বাংলাদেশের একজন আম্পায়ার হিসেবে শরফুদ্দৌলার উপস্থিতি অনেকের মনেও আলাদা স্থান করে নেবে। যদিও সিরিজের বাকি তিন টেস্টে তিনি থাকছেন না। ব্রিসবেনের পর, অ্যাডিলেড, মেলবোর্ন ও সিডনিতে দেখা যাবে অন্যদের, যেমন নিতিন মেনন, জেফ ক্রো, আহসান রাজার ও ক্রিস গ্যাফানিকে।






