জাতীয় স্বাধীকার তদন্ত কমিশন বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত শেষ করে তার প্রতিবেদন কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতিতে জমা দেওয়া হয়। কমিশনের সদস্যরা মধ্যে রয়েছেন— অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুর রহমান বীর প্রতীক, মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, ড. এম. আকবর আলী, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মার্কিন গবেষক মো. শরীফুল ইসলাম এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন। এ সময় উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের এই ভয়াবহ ঘটনা নিয়ে জাতি দীর্ঘ দিন অন্ধকারে ছিল। তদন্তের মাধ্যমে আসল সত্য উদঘাটিত হওয়ায় এবং জাতীয় প্রশ্নের উত্তর পাওয়ায় দেশবাসী খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক সময় পার করেছে। তিনি বলেন, এই ঘটনার তদন্তে যে সব তথ্য, আলামত ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগৃহীত হয়েছে, তার মাধ্যমে অনেক জটিলতা দূর হবে এবং প্রকৃত সত্য প্রকাশ পাবে। প্রধান অনুসন্ধানকারি ফজলুর রহমান বলেন, তদন্তের প্রতি পেশাদারিত্ব ও সততা বজায় রেখে কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে, যাতে ফলাফল সঠিক, নিরপেক্ষ ও ত্রুটিমুক্ত হয়। তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনাটি ১৬ বছর আগের হওয়ায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে এবং অনেক আদর্শ ব্যক্তিরা দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। এর পাশাপাশি তদন্তের পারিপার্শ্বিক প্রক্রিয়াও বর্ণনা করেন তিনি, যেখানে সাক্ষীদের ভয়েস শোনা, অনেকের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা এবং প্রমাণ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে। প্রধান তদন্তকারী দাবি করেন, এই তদন্তের মাধ্যমে বিডিআর বিদ্রোহের মূল রহস্য উন্মোচন হয়েছে, এবং সরকারের বিভিন্ন স্তর থেকে কেমন করেই নীরবতা বজায় রাখা হয়েছিল সেটাও প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে, বাহ্যিক শক্তি বা বহিঃশক্তির সরাসরি জড়িত থাকার পাশাপাশি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের দলীয় ভূমিকা ও বিভিন্ন পক্ষের সহযোগিতা এই প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। তালুকদার জানান, এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনায় যুক্ত ছিল তৎকালীন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসের। তিনি যোগ করেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এই ঘটনায় সরাসরি অংশ নিয়েছে এবং পিলখানায় মিছিল নিয়ে প্রবেশের সময় বহিরাগত অর্ধশতাধিক লোকের উপস্থিতি ছিল। পুরো ঘটনাটির পেছনে ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’, যা নির্দেশ দিয়েছিলেন এই আক্রোশের পরিকল্পনা সফল করতে। তিনি আরও জানান, এই ঘটনার দায়ভার তৎকালীন সরকারের শীর্ষনেতৃত্ব থেকে শুরু করে সেনাপ্রধান পর্যন্ত বর্তায় এবং রাজনৈতিকভাবে সমাধান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, র্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাও স্পষ্ট হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, তখনকার কিছু গণমাধ্যমের কিছু সাংবাদিক ও কতিপয় পেশাদার সাংবাদিকের ভূমিকা ছিল অপেশাদার ও অপ্রয়োজনীয়। এছাড়াও, সেই সময় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন) যেখানে শেখ হাসিনা বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, সেই পুরো ঘটনার বিস্তারিত নাম ও পরিচয় সংরক্ষণে কিছু লালসা ও উদ্যোগের অভাব ছিল। প্রতিবেদনটি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশও করেছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায় এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিন্তে প্রদান করা করা হয়। এ সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নের বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল আব্দুল হাফিজ এবং স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি।






