জার্মানির উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেডের সহযোগিতায় দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ‘এসটিআইএলই-দ্বিতীয়’ প্রকল্পের অধীনে পণ্যের ট্রেসেবিলিটি বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আয়োজিত হয়েছে। এই আলোচনাকে মূলত বাংলাদেশের ইইউ বাজারে পণ্যের প্রবেশাধিকার ও রপ্তানি প্রতিযোগিতার জন্য অপরিহার্য বলে মানা হচ্ছে, যেখানে এলডিসি থেকে উত্তরণের সার্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য এটি এক জরুরি পদক্ষেপ। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আধুনিক ট্রেসেবিলিটি ব্যবস্থা রপ্তানির বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে, পণ্য সার্কুলারিটি প্রচার করতে এবং বৈশ্বিক বাজারে টেকসই উন্নয়ন ও দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণ নিশ্চিত করতে সহায়ক। এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশকে আরো বেশি স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা অর্জনে সহায়তা করবে।
বিল্ড নামে এক গবেষণা সংস্থা এই আলোচনা পরিচালনা ও গবেষণার তথ্য সরবরাহ করে। বিল্ডের প্রধান নির্বাহী ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, ট্রেসেবিলিটি শক্তিশালী করা বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপর্ণ অগ্রাধিকার। তিনি আরও বলছেন, বৈশ্বিক চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই উদ্যোগ ব্যাপকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ইইউ কর্তৃক প্রবর্তিত সার্কুলার ইকোনমি, ডিজিটাল পাসপোর্টস (ডিপিপি), দায়িত্বশীল বাণিজ্য ও টেকসই উন্নয়নকে সামনে রেখে কাজ করছে।
বিশেষ করে, বাংলাদেশ-ইইউ বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ অর্থাৎ মূলত তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে এই অনুশীলন প্রাসঙ্গিক। এজন্য ২০৩০ সালের মধ্যে ইইউ’র গ্রীন ডিলের নতুন শর্তাবলী অনুসারে নীতিমালা মানিয়ে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি দেশব্যাপী ‘জাতীয় ট্রেসেবিলিটি কৌশল’ প্রণয়নের কথাও তুলে ধরেন, যেখানে খাতভিত্তিক ট্রেসেবিলিটি পাইলট প্রকল্প চালু থাকবে, যার নেতৃত্ব দিবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে জিআইজেড।
মূল প্রবন্ধে বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জের কথাও উল্লেখ করা হয়—যেমন প্রাথমিক সংরক্ষণের ব্যয়, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়, কার্যক্ষমতা ও তথ্য যাচাই।
অভিজ্ঞতা থেকে জানা গেছে, ভিয়েতনাম, চীন, জাপান, কোরিয়া ও ভারতে শক্তিশালী ট্রেসেবিলিটি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ। বিল্ড সুপারিশ করে, দেশের খাতভিত্তিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এই ব্যবস্থাটিকে শক্তিশালী করতে হবে। যেমন, সবুজ অর্থায়ন চালু, তথ্য অবকাঠামো সম্প্রসারণ এবং পোশাক শিল্পের জন্য ডিরেক্টরি তৈরি।
মুহূর্তে, উদ্যোক্তারা বিভিন্ন গার্মেন্টস ব্র্যান্ড ও কনসালটেন্টের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা facing। এ জন্য একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠার জরুরি প্রয়োজন তুলে ধরা হয়, যেখানে জার্মানির উদাহরণ দিয়ে সাহায্য চাওয়া হয়।
বিজিএমইএ’র প্রতিনিধি শেখ এইচ এম মোস্তাফিজ বলছেন, একটি একক জাতীয় মান বা নির্দেশিকা থাকলে ট্রেসেবিলিটি কার্যক্রম আরো সহজ ও খরচ-সাশ্রয় হবে। আবার, ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি জান্নিস হোসেন সাধারণ চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো তথ্যের প্রাপ্যতা ও উৎপাদন, এবং ডিজিটাল অবকাঠামোর ব্যয়।
বৈঠকে অংশ নেন ব্যবসার নেতারা, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও শিল্প খাতের প্রতিনিধিরা। চলমান খাতভিত্তিক পাইলট প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরে তারা উল্লেখ করেন, কিছু ক্ষেত্রে এখনো উন্নয়ন প্রয়োজন, যেন নিম্ন ও মধ্যম স্তরের প্রতিষ্ঠানগুলোও ট্রেসেবিলিটি তথ্যের পুরো চাহিদা পূরণ করতে পারে।
উপসংহার হিসেবে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন এক বহুপক্ষীয় সংলাপ প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে। এই প্ল্যাটফর্মে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদাররা মিলেঝুলে কৌশল নিয়ে আলোচনা করবে। রবিবার, এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে রপ্তানি প্রবর্তকরা থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মতো দেশের মডেল দেখার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
অবশেষে, পরিকল্পনা বিভাগের যুগ্ম সচিব মোস্তফা জামাল হায়দার উল্লেখ করেন, ট্রেসেবিলিটি উন্নতি বাংলাদেশকে এলডিসির পরবর্তী পরিণত পরিস্থিতিতে আরও ভালোভাবে সহায়তা করবে।






