দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা এখন শুধু দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রই নয়, বরং এ বন্দর প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য একটি কৌশলগত ট্রানজিট কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের সঙ্গে উন্নত সড়ক, নদী ও রেলপথের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে এটি এলাকা ভিত্তিক বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।
অপেক্ষায় রয়েছে বন্দর অভ্যর্থনা সুবিধা (পিআরএফ) প্রকল্পের উদ্বোধন, যা জাহাজ থেকে তেল সংগ্রহের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং নদী ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির প্রাণস্রোত হিসেবে মোংলা বন্দর খাদ্যশস্য, সিমেন্ট, জিংকার, সার, গাড়ি, যন্ত্রপাতি, চাল, গম, কয়লা, জ্বালানি তেল, পাথর, ভুট্টা, তৈলবীজ ও এলপিজি আমদানির পাশাপাশি হিমায়িত মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, পাট ও পাটজাত পণ্য, টাইলস, রেশম বস্ত্রসহ নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সিনিয়র উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. মাকরুজ্জামান জানিয়েছেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দর তার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। বার্ষিক ৮.৮৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্য পূরণ করে ১০.৪১২ মিলিয়ন টন টেকেছে, যা পুরোটাই ১৭.২৫ শতাংশ বেশি। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০,০০০ টিইইউ, তবে এর চেয়ে বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে ২১,৪৫৬ টিইইউ।
আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩৩.৮৭ কোটি টাকার, তবে আয় হয়েছে ৩৪৩.৩০ কোটি টাকা। নিট মুনাফা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ৬২.১০ কোটি টাকা, যা মোটে ২০৩.৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি।
উল্লেখ্য, আধুনিক সরঞ্জামাগুলোর কারণে এখন প্রতি ঘণ্টায় ২৪টির বেশি কনটেইনার পরিচালনার সম্ভব হচ্ছে। নিয়মিত ড্রেজিংয়ের ফলে নাব্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একাধিক জেটিতে একসঙ্গে জাহাজ পরিচালনা সম্ভব। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মোংলা বন্দরে ৩৫৬টি জাহাজ এসেছ, ১৩,৮৫৪ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে, ৪,১৩৯টি যানবাহন প্রক্রিয়াজাত, এবং ৪.৪ মিলিয়ন টন পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে।
মাকরুজ্জামান জানান, প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য মোংলা বন্দর ট্রানজিট সুবিধার বড় সম্ভাবনা তৈরি করছে। সক্ষমতা সম্প্রসারণের প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বছরে ১৫০ মিলিয়ন টন কার্গো এবং ৩৫০ থেকে ৪০০ লক্ষ টিইইউ কনটেইনারের হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে। এতে শিপিং এজেন্ট, কেমি, স্টিভডরিং ও শ্রমিকের কর্মসংস্থান আরও বাড়বে।
বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন রহমান জানান, পশুর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং প্রকল্পের মাধ্যমে জেটি পর্যন্ত ১০ মিটার ড্রাফটসহ আরো ১০০টির বেশি জাহাজ চলাচল করতে পারবে এবং রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত ১৩০টি অতিরিক্ত জাহাজ পরিচালনা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বললেন, মোংলা বিনিয়োগ ও আধুনিকায়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে, ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্য নতুন প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। মোংলা বন্দরকে বিশ্বমানের আধুনিক বন্দরে রূপান্তর করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত করতে এসব উদ্যোগ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।






