জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা বন্দরের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং প্লাটিনাম জয়ন্তী উদ্যাপিত হয়েছে। এই বিশেষ দিনটি উপলক্ষ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যার মধ্যে ছিল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা।
সোমবার, দুপুর ১২টায় বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে বন্দরের সদর দপ্তর থেকে শুরু হয়ে জেটি ফটক পর্যন্ত র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান, তিনি ফুলের বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে এ উৎসবের সূচনা করেন। এরপর বন্দরের জেটির অভ্যন্তরে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই মহান দিনটি উদযাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বন্দরের সম্মানিত সদস্য ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যেমন কমডোর মো. শফিকুল ইসলাম সরকার, কাজী আবেদ হোসেন, ড. এ. কে. এম. আনিসুর রহমান, কালাচাঁদ সিংহ, ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, কর্নেল মো. ফিরোজ ওয়াহিদসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বন্দরের ব্যবহারকারীরা।
এদিন, বন্দরের কর্মতৎপরতা ও কাজের স্বার্থে ১৩ জন কর্মকর্তাকে স্বীকৃতি স্বরূপ পুরস্কৃত ও সম্মাননা দেওয়া হয়। এছাড়াও, ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য ৮ জন কর্মকর্তাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ অবদান ও কার্যক্রমের জন্য সম্মাননা প্রদান করা হয়। গত বছরের ২ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিআরএল-এ কর্মরত ৫৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রীতির আলিঙ্গনে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে, ১৯৫০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে পোর্ট অব চালনা হিসেবে এই বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। প্রথমে চালনা বন্দর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এরপর ১৯৮৭ সালে পোর্ট অব মোংলা নামেও পরিচিত হয়।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও এই বন্দরটির উল্লেখযোগ্য সাফল্য байқানো হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। বছর শেষে বন্দরে এই লক্ষ্য অতিক্রম করে ১ কোটি ৪ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন পণ্য হ্যান্ডেল হয়, যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে ১৭.২৫ শতাংশ বেশি। একই সময়ে কনটেইনার হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার TEUs, যা পেরিয়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৪৫৬ TEU।
রাজস্বও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান অর্থবছরে লক্ষ্য ছিল ৩৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। বছর শেষে এই সংখ্যা osiąc হয়ে দাঁড়ায় ৩৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে ২.৮৩ শতাংশ বেশি। এছাড়া, নিট মুনাফা ২০ কোটি ৪৬ লাখ টাকার লক্ষ্যকে ছাড়িয়ে ৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা হয়, যা ২০৩.৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি।
অধুনিক যন্ত্রপাতির সন্নিবেশ এবং নিয়মিত ড্রেজিংয়ের কারণে এখন একসাথে পাঁচটি জাহাজ হ্যান্ডলিং সম্ভব হচ্ছে। প্রাকৃতিক ও যান্ত্রিক সুবিধার কারণে দেশের নিকটবর্তী দেশগুলোতে এই বন্দরের ট্রানজিট পণ্য পরিবহন ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করছে। রেল, নৌ, ও স্থলপথের মাধ্যমে পাবনাগামী ও রংপুর-বরিশাল বিভাগের পণ্য পরিবহন আরও দ্রুত ও সহজতর হচ্ছে।
এছাড়াও, মোংলা বন্দরে সম্প্রতি চালু হয়েছে পোর্ট রিসিপশন ফ্যাসিলিটি (পিআরএফ), যা তেলবাহী ট্যাংকার বা জাহাজ থেকে দুর্ঘটনাজনিত তেল নিঃসরণের পরিমাণ কমাতে সক্ষম। এর ফলে পরিবেশের ক্ষতি রোধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের জন্য নানা কর্মসংস্থান সৃষ্টি এই বন্দরের মাধ্যমে হয় এবং খাদ্যশস্য, সিমেন্ট, কাঠ, গম, কয়লা, তেল, পাথর, ভুট্টা, এলপিজি গ্যাস, সাদামাছ, চিংড়ি, পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্যসহ নানা ধরনের পণ্য আমরি-রপ্তানি হচ্ছে।
মোংলা বন্দরকে আধুনিক ও বিশ্বমানের বন্দরে রূপান্তর করতে চলমান নানা প্রকল্পের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য নতুন পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। এভাবে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সামুদ্রিক খাতের উন্নয়নে দৃড় পক্ষে এগিয়ে যাচ্ছে মোংলা বন্দর।






