রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে চাহিদার কমতিতে ডিলাররা দীর্ঘদিন ধরে গুদামে পড়ে থাকা ইউরিয়া সার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ফলে তারা ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন। অন্যদিকে, ডাই এনোমোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সারের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও প্রয়োজনীয় সরবরাহ না পাওয়ায় ডিলার ও কৃষকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। এটি বিভিন্ন সমস্যার জন্ম দিচ্ছে, যেমন অতিরিক্ত দামে বিক্রি এবং ব্যবসায় সমস্যা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উঁচু এলাকার কারণে গোয়ালন্দে রবি মৌসুমের শুরু অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে। এই এলাকায় কৃষকরা সবজি, মাছের খামার, কলা বাগানসহ নানা ধরনের ফসলের চাষে ডিএপি সার ব্যবহার করেন।
কৃষকরা বলেন, জমিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগের ১০ দিনের মধ্যে তার কার্যকারিতা শেষ হয়, কারণ এতে মাত্র নাইট্রোজেন থাকে। তবে, ডিএপি সার দীর্ঘ সময়, অন্তত তিন মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকে এবং এর মধ্যে ইউরিয়া ও টিএসপি সংমিশ্রণ থাকায় তারা এই সারকে বেশি পছন্দ করেন।
গোয়ালন্দে সরকারি নিয়ন্ত্রিত বিসিআইসি ডিলাররা জানিয়েছেন, কৃষকদের চাহিদার ভিত্তিতে তারা গত সেপ্টেম্বর মাসে পাঁচজন বিসিআইসি ডিলারের জন্য ৫০০ মেট্রিক টন ও বিএডিসির জন্য চারজন ডিলারের জন্য ২০০ মেট্রিক টনের ডিএপি সার বরাদ্দ চায়। এই চাহিদা উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরকে জানানো হয়।
অর্থাৎ, অক্টোবরের জেলা সার ও বিজ মনিটরিং সভায় এই বিষয়টি আলোচনা হয় এবং রেজুলেশনও নেয়া হয়। কিন্তু, চাহিদার তুলনায় তখন মাত্র ২১২.৭৫ মেট্রিক টন ডিএপি সার বরাদ্দ প্রদান করে কর্তৃপক্ষ, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
বিষয়টি সমাধানে আশপাশের উপজেলা থেকে কিছু যোগান আনার অনুমতি চাওয়া হলেও কর্তৃপক্ষ তা নাকচ করে দেয়। এর ফলে এখনও এ সংকট চলছে।
এতে করে, খুচরা বিক্রেতারা অধিক মূল্যে ডিএপি বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে, যদিও এ বিষয়ে ডিলারদের দায় চাপানো হচ্ছে। ডিলাররা জানিয়েছেন, প্রয়োজন যেমন না থাকলেও, প্রতিমাসে পাঁচজন বিসিআইসি ডিলারকে ২৭৭ মেট্রিকটন করে ইউরিয়া সার দেয়া হয়, যার বেশিরভাগই অবিক্রীত হিসেবে গুদামে পড়ে থাকে, ফলে ক্ষতি হয় লক্ষাধিক টাকা।
সারেজনক স্থানগুলোতে দেখা গেছে, বিভিন্ন ডিলারদের গুদামে অবিক্রীত ইউরিয়া সার পড়ে রয়েছে। গোয়ালন্দ বাজারের বিসিআইসি ডিলার হোসনে জামান জানিয়েছেন, নভেম্বরের পর্যন্ত ৯৮৪ বস্তা ইউরিয়া সার গুদামে অপ্রচলিত অবস্থায় রয়েছে। অন্য এক ডিলার বলেছেন, নভেম্বর মাসে তার ৬২ মেট্রিক টন সরবরাহ ছিল, যার প্রায় ৩৫ টন এখনো বিক্রি হয়নি।
এই অবস্থা চলার কারণে ডিলাররা বিশাল লোকসানের শিকার হচ্ছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পর জানা গেছে, ডিসেম্বরের জন্য আবারও ৫৬০০ বস্তা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, কিন্তু সমস্যা সমাধানে এখনও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রায়হানুল হায়দার বলেন, এখানে অনেক কৃষক প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডিএপি সার ব্যবহার করেন, যা এই সংকটের কারণ। তিনি সংশ্লিষ্টদের আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
অপরদিকে, রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, এই জেলায় ডিএপি সারের কোনো ঘাটতি নেই। তবে, গোয়ালন্দে সংকটের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, এবং আশা করা যায়, চলমান রবি মৌসুমে সরবরাহের সকল সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।






