ইমরান খানের শারীরিক অবস্থা নিয়ে গোপনীয়তা এবং অজানা বিষয়গুলো সরকার ও পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না করায় দেশজুড়ে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। পরিবার আশঙ্কা করছে, তার শারীরিক অবস্থা বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরাসরি জানা যাচ্ছে না, যার ফলে তার সুস্থতা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্ন ওঠেছে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছেন। তবে বেশ কিছু সময় ধরে তার সঙ্গে পরিবারের কিংবা দলের অন্য সদস্যদের যোগাযোগ ব্যাহত রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তাদের কাছ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বা যাচাইযোগ্য তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না, এই পরিস্থিতিতে তারা খুবই উদ্বিগ্ন এবং মানসিক চাপের মধ্যে আছেন।
ইমরানের বোনেরা, পিটিআই নেতৃবৃন্দ ও সমর্থকদের দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত পরিবার তার সঙ্গে সরাসরি দেখা কিংবা যোগাযোগ করতে পারেনি। এর ফলে তারা বেশ হতাশ ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তাদের জন্য এটা একেবারেই স্বভাববিরুদ্ধ ও মানসিকভাবে ভারী হয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি, কারণ তারা জানে না কারাবন্দি ইমরান খান নিরাপদ আছেন কি না।
কাসিম খান, ইমরানের ছেলে, জানিয়েছে যে তার বাবা কীভাবে শারীরিকভাবে আছেন বা আহত কিনা, তার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় না। তারা এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র গোপনীয় সূত্র থেকে শুনেছেন, তাদের বাবার অবস্থা নিয়ে কোনো যাচাই-বাছাই করতে পারেননি। তিনি বলছেন, এটি তাদের জন্য খুবই দুঃখজনক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার মতো। গত কয়েক মাসে পরিবারের সদস্যরা অনেকবার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। এসব কারণে তারা ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগে ভুগছেন।
অভিযোগ করা হয়েছে, ইমরানের ব্যক্তিগত চিকিৎসক দীর্ঘ দিন ধরে তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারছেন না, যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক কারাবন্দির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের ভাষ্য, গত এক বছর ধরে ইমরানের চিকিৎসা সেবা বাধাগ্রস্ত হয়েছে, কোনও চিকিৎসক প্রবেশাধিকার পাননি।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনও মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে একজন অজ্ঞাত নামের কারাকর্মকর্তা বলেছেন, ইমরান খান এখন সুস্থ আছেন এবং তাকে আরও নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা নেই। তবে তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু জানাতে পারেননি।
ইমরান খান বর্তমানে ৭২ বছর বয়সে রয়েছেন। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে তাকে তোষাখানা ও অন্যসব মামলায় সাজা দেয়া হয়। এর আগে, এই মামলা গুলোকে সকল দোষের জন্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে দাবি করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই সব মামলায় তাকে নির্বাচনী ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখতে চান রাজনৈতিক শত্রুরা।
উদ্বেগ আরও বেড়েছে, যখন পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এই দীর্ঘকাল ধরে পরিবারের সঙ্গে কোনও দৃশ্যমান যোগাযোগ বা তথ্যপ্রাপ্তি সম্ভব হয়নি, যা সম্পূর্ণভাবে ইচ্ছাকৃত। তারা মনে করছেন, তাদের বাবাকে গোপন করে রাখার জন্যই এই বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা দাবি করেন, ইমরান খান পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা এবং তার রাজনীতি মোকাবেলায়, তাকে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে পরাজিত করা সম্ভব নয়, এ কারণেই তাকে এমনভাবে আড়ালে রাখা হচ্ছে।
কাসিম বলেছেন, যদিও তিনি ও তার বড় ভাই সুলাইমান ইসা খান রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও, তারা আন্তর্জাতিক স্তরে ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের বাবার বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। সংবাদ সংস্থাকে তিনি জানান, তারা সর্বশেষ ২০২২ সালের নভেম্বরে বাবার সঙ্গে দেখা করেছিলেন, যখন তিনি হত্যাচেষ্টার কাছ থেকে বেঁচে যান। সেই সময়ের চিত্র ও স্মৃতি এখনও মনে আছেঁ, আর এখন এই দীর্ঘ যোগাযোগবিহীন পরিস্থিতি তাদের মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
অপরদিকে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ইমরানের ছেলেরা চাইলে বাবার সঙ্গে দেখা করতে পারেন। তবে এই কথার জবাবে ইমরানের সাবেক স্ত্রী জেমাইমা গোল্ডসমিথ বলেন, ‘তারা তার সঙ্গে ফোনে কথা বলতেই পারছে না। কেউই তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারছে না।’
পাকিস্তান মানবাধিকার কমিশন (এইচআরসিপি) প্রকাশ করে দিয়েছে, ইমরানের বন্দিদশার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ। তারা বলছে, পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাতের সুযোগ না দেয়া এক গুরুতর লঙ্ঘন, যা মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল। সংস্থাটি সরকারি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে যথাযথ নিয়ম মানার এবং বন্দিদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।






