নওগাঁয় প্রশাসনিক অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও শহরের হাট-নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে শীতবস্ত্র ও শিল্পপণ্যের এক বিশাল মেলা চালু করা হয়েছে। এই মেলা গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে এখনো চলমান রয়েছে, যা নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক। মেলার জন্য প্রাথমিকভাবে কোনও সরকারী অনুমতি না নিলেও, দুর্ভাগ্যবশত, এটির কাজে জেলা পুলিশের নাম ব্যবহৃত হচ্ছে, যা সত্যিই অপ্রত্যাশিত।
জানা গেছে, এই স্কুল মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, পরীক্ষা ও খেলাধুলার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে দুই সপ্তাহ আগে থেকেই এ জায়গায় মেলার অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং পুরো মাঠটি টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়, যার ফলে স্কুলের মূল গেট বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা বিকল্প দরজা দিয়ে প্রবেশ করছেন। চলমান পরীক্ষার সময় এই নির্মাণ কাজের জন্য শব্দ ও ভিড় বৃদ্ধি পেয়ে শিক্ষার্থীদের মনোযোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার দুপুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার ফাঁকে আসছিল মেলায় ঘুরতে।
রাজশাহী শিল্ক অ্যান্ড বেনারসি জামদানি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এই মেলার আয়োজন করেছে, যেখানে বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, নৌকা ও ড্রাগন রাইডসহ অনেক আকর্ষণীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মেলা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা থাকে, সাধারণ দর্শকদের জন্য প্রবেশ মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ২০ টাকা।
স্থানীয় শিক্ষার্থীদের অনেকে বলেন, গেট বন্ধ থাকায় প্রবেশে সমস্যা হচ্ছে এবং পড়াশোনা ও পরীক্ষা চালাতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। তারা বলছেন, এখানে বেশি ভিড় ও শব্দের কারণে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি, মাঠে খেলাধুলার কার্যক্রমও বন্ধ থাকায় শিশু-কিশোররা খুবই অসন্তুষ্ট।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, এর প্রভাবে পরীক্ষার ধারাবাহিকতায় কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে না, তবে অবকাঠামো নির্মাণের সময় কিছু অসুবিধা তো হয়েছে।
ইভেন্টের স্বত্বাধিকারী রহিদুল ইসলাম জানান, এখনো আনুষ্ঠানিক অনুমতি পাওয়া যায়নি। তারা পরিকল্পনা করেছেন, আগামী ১২ ডিসেম্বর স্কুল পরীক্ষা শেষে পুরো মেলা চালু করবেন। এগুলো সম্পর্কিত বিভিন্ন দপ্তরও নিশ্চিত করেছেন যে, অনুমোদনের প্রক্রিয়া এখন চলমান।
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রশাসক এবং হাট-নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি জান্নাত আরা তিথি বলেন, প্রধান শিক্ষকই স্কুল মাঠে মেলা চালানোর অনুমতি দেওয়ার অধিকার রাখেন না, এমন কোনও অনুমতিও তারা পাননি। তারা শুধুমাত্র একটি আবেদন পেয়েছেন, যা এখনও প্রক্রিয়াধীন।
অপরদিকে, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, নওগাঁয় চলমান শিল্প ও বাণিজ্যিক মেলার সাথে জেলা পুলিশের কোন সম্পর্ক নেই। এই মেলার জন্য জেলা পুলিশ বা পুলিশ নারী কল্যাণ সংঘের কোনো সংঙ্গতি নেই। কিছু মহল বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিতে চাইছে।
অবশেষে, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন, মেলার জন্য একটি আবেদন পেয়েছেন, এবং তার অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে। সব পক্ষের সহযোগিতায় দ্রুত এ বিষয়টি সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টরা।






