বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় দেশের অন্যতম বৃহৎ এবং প্রযুক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ চামড়া শিল্পের উদ্বোধনী একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। এই আসরের নাম ‘লেদারটেক বাংলাদেশ’, যেখানে চামড়া শিল্পের সঙ্গে জুতা উৎপাদন, আধুনিক যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন উপকরণ, রাসায়নিক ও আনুষঙ্গিক পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) এক্সপো ভিলেজে এই ১১তম আসরের উদ্বোধন করা হয় বৃহস্পতিবার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। এছাড়াও দেশের পাশাপাশি চীন, ভারত এবং পাকিস্তানের শিল্প সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে চামড়া শিল্প এখনও তার পূর্ণ সম্ভাবনার দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। ‘লেদারটেক’ এর মতো এই ধরনের প্রদর্শনী কেবল মাত্র একটি প্রযুক্তি প্রদর্শনী নয়, এটি এই শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। তিনি আরও বলেন, সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ে বাংলাদেশের চামড়া শিল্প আরও এগিয়ে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর উল্লেখ করেন, চামড়া শিল্পে বাংলাদেশ এখন রপ্তানি-ভিত্তিক উৎপাদন বাড়ানোর এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আছে। আরো অগ্রগতি করতে হলে নীতিমালা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে জোর দিতেই হবে, যাতে এই শিল্পটি আন্তর্জাতিক বাজারে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
বিএফএলএলএফইএর চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, চামড়াজাত পণ্য বাংলাদেশে অন্যতম সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত। ‘লেদারটেক’ এর মতো আন্তর্জাতিক আসর আমাদের এই খাতের বিশ্বজোড়া পরিচিতি আরো বাড়াচ্ছে।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান এএসকে ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতান ভূঁইয়া জানান, এই বছর প্রায় ২০০ কোম্পানি অংশ নিচ্ছে, যারা ৮টি দেশের—from বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীনসহ—প্রায় ২০০টি পণ্য প্রদর্শন করবে। এতে যুক্ত থাকছে বিভিন্ন দেশের শিল্প সংগঠন, যেমন কাউন্সিল ফর লেদার এক্সপোর্টস ইন্ডিয়া (সিএলই), পাকিস্তান ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিটিএ), ইন্ডিয়া ফুটওয়্যার কম্পোনেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইফকোমা) এবং চীনের গুয়াংডং সু-মেকিং মেশিনারি অ্যাসোসিয়েশনের (জিএসএমএ)।
প্রদর্শনী শুরু হয়েছিল ১১ বছর আগে, মূলত একটি প্রযুক্তি প্রদর্শনী হিসেবে। এর লক্ষ্য ছিল দেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য বিশ্বজুড়ে জুতা, ভ্রমণ আনুষঙ্গিক ও সংশ্লিষ্ট পণ্যের উন্নত প্রযুক্তি পৌঁছে দেয়া। সময়ের বিবর্তনে এটি বাংলাদেশের চামড়া, জুতা ও সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্ভাবন ও বাজার সম্প্রসারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। গত দশকে ‘লেদারটেক বাংলাদেশ’ শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত হয়েছে।
চামড়া ও জুতা শিল্প দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত হিসেবে বিবেচিত। এই শিল্প বিশ্ববাজারের চামড়াজাত পণ্যের ৩ শতাংশ ও বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করে। শিল্পনীতি ২০২২ অনুযায়ী, এই খাতের রপ্তানি বহুমুখিকরণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যেন এটি আরও দক্ষ ও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠুক।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) অক্টোবরের মধ্যে এই খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই খাতে রপ্তানি বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৯.৭%, যার ফলে এই খাতের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৯১.৫ মিলিয়ন ডলার, যা ছিল ৫৩৯.৪ মিলিয়ন ডলার। কয়েক মাসের অস্থিরতা কাটিয়ে এই শিল্প ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হয়ে উঠছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রদর্শনী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে, প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত। ব্যবসায়িক দর্শনার্থীরা বিনামূল্যে এই প্রদর্শনীতে প্রবেশ করতে পারবেন।






